ঝরে পড়া ফুল
শিরীন আকতার বানী।
১৭/১১/২০২১।
অল্প কিছু দিনপর বাবার বাড়ীর উঠোনে পা রেখেই কেঁপে ওঠে মায়া। অল্প মানে তার বিয়ে হয়েছে মাত্র দেড় মাসখানেক। এর মধ্যে তার একবারও আসা হয়নি। ভেজানো দরজা খুলে ধীরে ধীরে গিয়ে দাড়ায় বাবার শিয়রের কাছে। কি যে সুন্দর মায়াময় শান্ত চেহারা বাবার। ঘুম ভাঙাতে মন চাইলো না। দুচোখ ভরে বাবাকে দেখতে লাগলো।এতো ভোরে মা রান্নাঘরে কি করছে,খুটখাট শব্দে সেদিকে গিয়ে দেখে মা কড়া লিকারের চা বানিয়ে সাথে টোস্ট নিয়ে সুন্দর করে ট্রে সাজিয়েছে বাবার জন্য। কিন্তু মা কাঁদছে কেন। নিশ্চয়ই আমার কথা মনে হয়েছে। ভাবতে থাকে মায়া। বিয়ের আগে চা বানাতো সে নিজেই । তারপর চুপিচুপি বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম ভাঙাতো। বাবা বলতো তুই আমার মায়ের মতো করে ঘুম থেকে জাগাস। ছোট্ট বেলায় আমার মা এভাবেই ঘুম ভাঙাতো। মায়া বলে আমিই তো তোমার মা।
দেখো না,আমার চেহারা একেবারে দাদির মতো। আমাকেই মা বলবে সবসময়।সেই থেকে বাবা আর কখনো মায়ার নাম ধরে ডাকেনি।
বলতো আমার মা কই? ছেলের কাছে আয় মা। মায়া ছুটে বাপের কাছে আসতো। মেয়ের শাসনে বাবা খুব আনন্দ পেতো। এতো কথা ভাবতে ভাবতে মা যে কখন ট্রে নিয়ে রান্নাঘর থেকে চলে গেলো চোখে পানি নিয়ে, খেয়াল করলো না। আসলে বাবাকে একটু বেশিই ভালোবাসে সে।ছোটোবেলার মতো ছুটে বাবার ঘরে গেলো। মাকে বললো মা, আমি বাবাকে জাগাই, তুমি ডেকো না। মা যেন শুনতেই পেলো না কথা, একবার তাকালোও না। আবার আমার কথা মনে করেই কাঁদছে। মুখ টিপে হেসে কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো সে। একি মাকে ধরতে পারছি না কেন! হাত ফসকে যাচ্ছে কেন!
বাবাকে ডাকলাম বাবা জাগলো না। মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলাম, বাবার চুল গলে আমার হাত বেরিয়ে গেলো, ধরতে পারছি না কেন!
চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম, শুনতে পেলো না।মাকে ডাকলাম, মা ও শুনতে পেলো না। চিৎকার করে কাঁদছি কেউ ফিরে তাকাচ্ছে না।।এতো রাগ আমার উপর?
এতো আদরের সন্তান আমি তোমাদের না জানিয়ে পালিয়ে গেলাম। বিয়ে করে ফেলাম। বাবা তুমি খুব কষ্ট পেয়ে রেগে গিয়ে বললে আর কখনো যেন মুখ না দেখাই।
বাবা ওঠ। ওরা তোমার আদরের মেয়েকে ভালোবাসেনি বাবা। তুমি সম্পর্ক রাখবে না জেনে, ওরা হতাশ হয়ে আমার উপর অনেক নির্যাতন করেছে। আমার অনেক কষ্ট হয়েছে বাবা, সেদিন রান্নাঘরে আমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মেরে, ঘরের পিছনে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে।
বাবা ওঠ,আর রাগ করে থেকোনা বাবা। চলো, একবার গিয়ে তোমার মেয়েকে দেখে এসো। দেখোগে, তোমার কথা না শোনা মেয়ের কপালে একটা কবরও জোটেনি। ওঠ বাবা, ওঠ।
১ Comment
very good job.