প্রিয় এই পৃথিবী।
খাদিজা নাসরিন।
সাল ২০৬০। পৃথিবীর অবস্থা শোচনীয়। বাতাস ভরে গেছে নানা ধরনের বিষাক্ত গ্যাসে। বিবর্তনের ধারায় মানুষই পৃথিবীকে করে তুলেছে দূষণীয়, বসবাসের অযোগ্য। ইরি একমনে কালচে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার এখন আর কিছুই করার নেই। আজকেই শেষ। আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত বাকি। সে এখানে একা আছে গত ১০ বছর! তার আগেই সবাই পাড়ি জমিয়েছে মঙ্গলে। সে মূলত এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারেনি। হঠাৎ তার হাতে ছোট্ট মডিউলটা থেকে লাল সাইরেন বেজে ওঠে। অর্থাৎ তার সময় হয়ে গিয়েছে। সে ধীর পায়ে কন্ট্রোল রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ক্রিস্টালের টেবিল থেকে স্টান্ট বোমাটা নিয়ে নেয়। পৃথিবীর শেষ চিহ্নটুকু মুছে দেয়ার দায়িত্ব যে তার উপরেই পরেছে! সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার স্পেসশিপটা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে। তারপর সে স্পেসশিপের ভিতরে নানা যন্ত্রপাতি ঠিক করতে লেগে যায়। কিন্তু সে কিভাবে এটা করবে! নাহ সে পারবে না! যেখানে তার জন্ম সেই প্রিয় পৃথিবী সে কিভাবে ধ্বংস করবে!
সে দৌড়ে চলে যায় কন্ট্রোল রুমের দিকে। সেখানের ভিডিস্ক্রিনটা চালু করা আছে। সেখানে জেনারেল তাকে নানা প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সে হঠাৎ বলে উঠে আমি এই কাজ করতে পারবো না। জেনারেল এক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যান। একটা নিচু শ্রেণির সাইবর্গ কিনা তার আদেশ অমান্য করে, তার মুখের উপর কথা বলে।
জেনারেল এর চেহারা কেমন পাথরের মত শক্ত হয়ে যায় এবং তার চোখগুলো লাল হয়ে যায়। হঠাৎ ইরির মাথার ভিতরে ভোঁতা শব্দ হতে থাকে। তার চোখে লাল আলো জ্বলতে থাকে। সে বুঝে যায় যে তার নিয়ন্ত্রণ এখন জেনারেলের হাতে। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে কিন্তু সে কাঁদবে না। তার মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এত আবেগ থাকা ভালো নয়! সে পৃথিবীর অস্তিত্ব ধ্বংস করবে না তাই জেনারেল তার অস্তিত্বই ধ্বংস করে দেবে। হঠাৎ সে একটু বিচলিত বোধ করে। সে দৌড়ে রুমের একটি কোনায় যায়, সেখানে একটি গাছ বিশেষ পদ্ধতিতে গত ১০ বছর যাবৎ সংরক্ষণ করা আছে। তার কাছে বেশি সময় নেই। সে তাড়াতাড়ি গাছটা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে আর গাছটা বিশেষ পদ্ধতিতে এক জায়গায় পুঁতে ফেলে। তার মাথায় ভোঁতা শব্দটি অধিক থেকে অধিকতর হতে থাকে। তারপর চোখের সামনে আস্তে আস্তে সবকিছু ঘোলাটে হয়ে আসে।
এর কয়েকদিন পর। জেনারেল নিজে পৃথিবীতে আসে এবং দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। সেই গাছটি যেন পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছে আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীকে!