ছুটির ফাঁদে
যুথিকা জ্যোতি
১
দিব্যেন্দু আর মালবিকা, ওরা নিঃসন্তান। দুজনেই অর্থ উপার্জন করে। স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছোট্ট ছিমছাম নির্ঝঞ্ঝাট সুখী পরিবার দিব্যেন্দুর। পেশায় ও’ একজন মেডিক্যাল ডাক্তার, চাউল্ড স্পেশালিষ্ট। আর স্ত্রী মালবিকা নার্সারী স্কুলের শিক্ষয়িত্রী। শহরের নিরিবিলি রেসিডেন্সি এলাকায় শ্বেতপাথরের মোজাইক করা অট্টালিকার মতো বিশাল বাড়ি ওদের। বাড়ির সদর দরজার একটু ওপরে নেইম প্লেটে বড় অক্ষরে খোদাই করে লেখা, “শান্তি কুটির”।
কর্মজীবনে মানব সেবাতেই দিব্যেন্দুর দিন যায় রাত পোহায়। দিনের শেষে ক্লান্ত সূর্য্য কখন যে অস্তাচলে ঢলে পড়ে, কখন সন্ধ্যে পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীটা অন্ধকারে ছেয়ে যায়, মালুমই হয় না। উদয়াস্ত অবিরাম রুগীর সেবা-শুশ্রুষা করতে করতে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-আনন্দ উচ্ছাসে একেবারে ভাটা পড়ে গিয়েছে।
দিব্যেন্দু মনস্থীর করে, এবার ১৫তম বিবাহ বার্ষিকীতে প্রিয়তমা স্ত্রী মালবিকাকে সারপ্রাইজ দেবে। মনে মনে প্ল্যান করে, বাইরে দূরে কোথাও বেড়াতে যাবে। সেই সঙ্গে সামার ভেকেশনও কাটিয়ে আসবে। রুটিন মাফিক একঘেঁয়ে কর্মজীবন থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিয়ে সমুদ্রসৈকতে যাবে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয়, বৃদ্ধা মাতারানী রমলা দেবীকে নিয়ে। তিনি বাতের ব্যথায় কোথাও নড়তে চড়তে পারেন না। সারাদিনে বেশীরভাগ সময় শুয়ে বসে কাটান। সকাল সন্ধ্যে দুইবেলা পালা করে লোক আসে ওনাকে মাসাজ করতে। এসব দেখাশোনা করা, ওনার দেখভাল করার জন্য একজন বিশ্বস্থ কাউকে তো দরকার। কিন্তু স্বেচ্ছায় দিব্যেন্দুর এতবড় একটা দায়িত্ব নেবে কে! তা’ হলে?
শুনে দিব্যেন্দুর বাল্যবন্ধু ভাস্কর বলল,-‘আরে এয়ার, ডোন্ট ওরি! ম্যায় হুঁ না!’
প্রভুভক্তের মতো আনুগত্য হয়ে মাথাটা ঝুঁকিয়ে বলে,-‘বান্দা হাজির হ্যায় দোস্ত! বিপদের সময়ই বন্ধুর পরীক্ষা হয়। মাসিমাকে নিয়েই তো তোদের এতো ভাবনা! ওকে, ডোন্ট ওরি। তুই নিশ্চিন্তে থাক। ওনার দেখাশোনা আমিই করবো। তুই শুধু বাড়ির চাবিটা আমায় দিয়ে যা ব্যস, কেল্লাফতে!’
অপ্রত্যাশিত বন্ধুর আশ্বাস পেয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে দিব্যেন্দু। পলকমাত্র দৃষ্টিপাতে নজরে পড়ে, উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো চোখের তারাদুটি চিকচিক করছে মালবিকার। দীর্ঘদিন পর ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির ঝিলিকটা দিব্যেন্দর নজর এড়ায় না। ঠিক যেন মেঘের আড়াল থেকে একফালি সূর্য্যের রস্মি উদ্ভাসিত হওয়ার মতো। উচ্ছলতায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মালবিকা। চোখমুখ থেকে ঝড়ে পড়ে একরাশ উচ্ছাস, উদ্দীপণা। প্রচন্ড উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। দিব্যেন্দুকে আরো উৎসাহিত করে, উদ্ধত করে।
সহাস্যে ভাস্করের পৃষ্টদেশে আলতোভাবে একটা চড় মেরে বলে,-‘ইয়ে হুই না বাত! দোস্ত হোতো এয়সা! গিভ মী ফাইভ!’ বলে দুই বন্ধুতে হাত মেলায়।
মুশকিল আসান হতেই শুরু হয়ে যায় রায়চৌধুরী দম্পতীর অবকাশ যাপনের প্রস্তুতি পর্ব। কত জল্পনা কল্পনা করে প্রহর গোনে মালবিকা।
অবশেষে সাময়িক প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে এসে গেল সেই শুভক্ষণ। ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ মেলে দ্যাখে, ঊষার প্রথম সূর্য্যের স্নিগ্ধ কোমল নির্মল হাস্যেৎজ্জ্বল একটি আনন্দময় সকাল। যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষগুলিকে অকুণ্ঠভাবে আহ্বান জানাচ্ছে, স্বতঃস্ফূর্ত মনে উল্কার মতো দ্রুত কক্ষচ্যুত হয়ে আনন্দময় কোনো এক প্রান্তরে চলে আসার জন্যে।
সবুর সয়না দিব্যেন্দুর। সকালে হতেই উৎসাহ-উদ্দীপণায় প্রগাঢ় বিশ্বাস নিয়ে বৃদ্ধা মাতারানী রমলা দেবী ও বাড়ির দায়িত্ব ভাস্করকে সঁপে দিয়ে সানন্দে বেরিয়ে পড়ে বাইরের রঙ্গিন পৃথিবীতে। সাময়িক অবসর নিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো খূশীর পাল তুলে সস্ত্রীক রওনা হয়ে যায় সমুদ্রসৈকতে।
কিন্তু মঞ্জুর হলো না বিধাতার। মাঝপথে গিয়ে একটি যাত্রীবাহী বিশাল টুরিষ্ট বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিব্যেন্দুর মারুতি গাড়িটা ভেঙ্গে মুছরে ছিকটে পড়ে একটি নোংরা কর্দমাক্ত খাঁদের গভীরে।
একেই চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাস্তার আলোও নিভু নিভু প্রায়। সুস্পষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমতবস্থায় টুরিষ্ট বাসটিও একই সাথে বিপরীত দিকে ছিকটে পড়লে অনেকে প্রাণ হারায়। কারো কারো গুরুতরোভাবে ঘায়েল হয়ে অর্ধমৃত অবস্থা। আর কেউ প্রাণে বেঁচে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিকৃত চেহারা নিয়ে বিকলাঙ্গ অবস্থায় শহরের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধিনে ছিল। সেখানেই রায়চৌধুরী দম্পতী দিব্যেন্দু, মালবিকা দুজনেই এ্যাড্মিটেড ছিল। তাদের কোনপ্রকার আইডেন্টিটি, বাড়ির ঠিকানা না পাওয়ার কারণে এতবড় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ তাদের আত্মীয় -পরিজনের নিকট তাৎক্ষণিক পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তারা কেউই অবগত ছিল না।
একেই বলে নিয়তির নিমর্ম পরিহাস! কার যে নজর লেগেছিল, মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে একেবারে গভীর অন্ধকারে ডুবে গেল রায়চৌধুরী দম্পতীর সুখের তরী। যা ক্ষণপূর্বেও কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু ভাগ্যের লিখন খন্ডাবে কে!
২
সুদীর্ঘ ন’মাস পর একদিন সম্পূর্ণ সুস্থ্য সবল হয়ে সশরীরে নিজের জায়গায় ফিরে আসে ঠিকই কিন্তু পাড়ায় ঢুকে নিজের বাড়িই আর খুঁজে পায় না দিব্যেন্দু। সারাপাড়া পরিক্রম করে বার বার একই জায়গায় অর্থাৎ নিজের বাড়ির প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়ায়। আর মনে মনে বলে,-এ কি, আমাদের ‘শান্তি কুটির’ কোথায় গেল? এখানে ‘ভবানী ভবন’ লেখা! কি আশ্চর্য্য, বাড়ির নক্সাও অনেক বদলে গিয়েছে। কিন্তু তাইবা সম্ভব হয় কি করে!
ইতিমধ্যে বাড়ির ভিতর থেকে এক বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে বললেন,-‘কাকে চাই?’
পড়লো মরার ওপর খাড়া। একেই নিঃসম্বল, মন-মানসিকতা দুর্বল। তন্মধ্যে অভাবনীয়ভাবে হঠাৎ অচেনা অজানা লোকের মুখদর্শণে হকচকিয়ে যায় দিব্যেন্দু। রুদ্ধ হয়ে যায় কণ্ঠস্বর। স্তম্ভিত হয়ে যায় বিস্ময়ে। গলা দিয়ে একটা শব্দ বের হচ্ছে না। অজান্তে মনে মনে উচ্চারিত হয়, দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে রায়চৌধুরী দম্পতীর প্রাণপ্রিয় “শান্তি কুটীর” নিলাম হয়ে গেল না কি! বিশ্বস্থ বন্ধু হয়ে ভাস্কর ওর এতবড় সর্বণাশ করবে!
হঠৎ বুকের পাঁজরটা যেন ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে দিব্যেন্দুর। কিছুতেই নিজের চোখদুটোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। উত্তেজনায় বিচলিত হয়ে ওঠে। শুকনো একটা ঢোক গিলে বিড় বিড় করে বলে,-ইনি আবার কে? এ তল্লাটে ভদ্রলোককে আগে তো কখনো দ্যাখে নি! ভাস্কর কাকে এনে রেখেছে? মা গেল কোথায়? মাকে তো দেখছি না! মা নিশ্চয়ই শুয়ে শুয়ে বাতের ব্যথায় কোঁকাচ্ছেন।
অবস্থার বেগতিক লক্ষ্য করে দিব্যেন্দু দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হয়,-নো, সামথিং ইস রং।
দিব্যেন্দু একজন এমবিবিএস ডাক্তার। মুহূর্তের জন্য স্তদ্ধ হয়ে গেলেও সহজে ভেঙ্গে পড়ার নয়। অজানা আশঙ্ক্ষা্য নিমজ্জিত হয়ে ভবানী ভবনের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত নজর বুলিয়ে বলে,-‘আপনি কে হে মশাই? আপনাকে তো চিনতে পারলাম না! ভাস্কর কোথায়? ওকে ডাকুন।’
একগাল পান মুখে নিয়ে ঠোঁট চিবিয়ে চিবিয়ে ভদ্রলোকটি বললেন,-‘আজ্ঞে আমি হইলাম ভবানীচরণ দাস। এ বাড়ির নুতন মালিক। মাত্তর কিনছি!’
মাথায় যেন বজ্রাঘাত পড়ল দিব্যেন্দুর। শোনামাত্রই রায়চৌধুরী দম্পতীর হৃদপিন্ড কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে সারাশরীর। মানসিক ভারসাম্যহীন হবার যোগার প্রায়। এক বিপদ কাটিয়ে এসে এ আবার কোণ বিপদে পড়লো!
একরাশ জিজ্ঞাস্য নিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে হাঁ করে চেয়ে থাকে। চোখে পথ দ্যাখে না। নেমে আসে অন্ধকার। বুকের পাঁজরখানা ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে গেল। অনুভব করে, পায়ের নীচ থেকে মাটিটা যেন সড়ে গেল। দিব্যেন্দুর আঠেরো বছরের পূঁজি ”শান্তি কূটির” আজ অন্যের মালিকাধীনে, অন্যের দখলে। এ কি শুনলো! এ কি সর্বণাশ হয়ে গেল ওদের।
আর ভাবতে পারছে না দিব্যেন্দু। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফ্যালে। আর্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করে ওঠে। -‘বলেন কি মশাই, এ বাড়ি আপনার? আপনি এ বাড়ির মালিক? মশাই, আপনার মস্তিস্ক, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে সব? কি বলছেন আপনি তা জানেন?
শুনে সাংঘাতিক চটে যান ভবানীচরণ। চোখমুখ রাঙিয়ে মুখের পেশীগুলি ফুলিয়ে একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। উত্তজনায় ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে হাঁপাচ্ছেন। সেই সঙ্গে প্রচন্ড তোতলাতে থাকেন। ফিচ্ করে পানের পিক ফেলে আঙ্গুল তুলে তো তো স্বরে অত্যন্ত রূঢ়ভাবে তীব্র কণ্ঠে গর্জে ওঠেন। ’আ-আমারে পাগল পাইছেন! আপনারা আইছেন কোত্থিকা? কেডা পাঠাইছে? আমি কুনো ভাস্করে রে চিনি না। যত্তসব আজগুবি কথা! যান যান, নইলে পুলিশ ডাকুম!’
পুলিশের হুমকি শুনে ক্ষোভে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ে দিব্যেন্দু। লেগে যায় তুমুল বাকযুদ্ধ। অথচ তখন স্বপ্নেও দিব্যেন্দু কল্পনা করতে পারেনি যে, নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশী ওরই বিশ্বস্থ বাল্যবন্ধু ভাস্কর মিত্র যার উপর ভরসা করে বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব সঁপে দিয়ে গিয়েছিল, সে-ই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ভাবতে পারেনি, জীবনের সাঁঝবেলায় এসে নিষ্ঠুর নির্দয়ের মতো এতবড় কঠিন আঘাত হেনে প্রৌঢ়ত্বে ওকে নিঃশ্ব করে একেবারে বেঘর, নিরাশ্রয় করে দিয়ে পথে বসিয়ে দেবে ওরই আজিজ দোস্ত ভাস্কর মিত্র। যা ঘূণাক্ষরেও কেউ টের পায়নি। যার হীনমন্যতা ও সংকীর্ণতাপ্রবণ মন-মানসিকতায় দিব্যেন্দুর হৃদয়ে আস্থা নামক শব্দটির দৃঢ়তা ও গুরুত্ব ক্রমশ বিলুপ্ত হতে থাকে।
ক্রোধে উত্তেজনায় সারাশরীর কাঁপতে থাকে দিব্যেন্দুর। সমবয়সি হোলে এতক্ষণ হাতাহাতি লেগে যেতো। বসিয়ে দিতো দু-চার ঘা, চড়-থাপ্পর। কিন্তু বয়সের মান-মর্যাদা মাথায় রেখে স্বাভাবিক গলায় বলল,-‘আমায় ভয় দেখাচ্ছেন! কি করতে পারবেন আপনি?’
তেড়ে আসেন ভনাণীচরণ। মুখের পেশীগুলি ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে আঙ্গুল তুলে বললেন,-‘আপনারে লাষ্ট ওয়ার্নিং দিতেছি, আমি পুলিশ ডাকুম। কেস করুম। বেয়াদপ মানুষ!’
বিড়বিড় করে আরো কি কি সব বলতে বলতে সদর দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়লেন।
ততক্ষণে শোচনীয় অবস্থা দিব্যেন্দুর। মুহুর্তের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেও নিজেকে কোনমতে সামলে নেয়। কিন্তু মালবিকা, ওকে সামলাবে কে! কে দেবে ওকে শান্তনা! বেচারি বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে ক্ষোভে, দুঃখে অসহায়ের মতো হুইল-চেয়ারে বসে বোবা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কথা বলারও যেন ওর শক্তি নেই।
ইতিমধ্যে গোলযোগ শুনে পাড়া-প্রতিবেশী কয়েকজন বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। তাদের কানাঘুষোয় জানতে পারে, দুই দুটো জলজ্যান্ত মানুষ হঠাৎ নিখোঁজ হবার পর সারাপাড়ায় যখন হৈচৈ পড়ে যায়, দিব্যেন্দুর বুড়িমা রমলা দেবী সহ আত্মীয়-স্বজনরা যখন অনুসন্ধানে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই দিব্যেন্দুর হৃদয়-প্রাণ ‘শান্তি কুটির’ সবার অলক্ষ্যে বেনামে বেচে দিয়ে, ওকে বেঘর, নিরাশ্রয় করে পলাতক দাগী আসামীর মতো রাতারাতি শহর ছেড়ে অন্যত্রে আত্মগোপন করে থাকে ওরই বিশ্বস্থ বন্ধু ভাস্কর মিত্র।
ততদিনে আত্মীয় অনাত্মীয়, পাড়া প্রতিবেশী সকলেই যখন রায়চৌধুরী দম্পতীকে নিশ্চিতভাবে মৃত বলে ধারণা করে, তখন দিব্যেন্দুর বৃদ্ধা মা রমলা দেবীও সেটাই মেনে নিলেন। তিনি তাঁর একমাত্র পুত্র ও পুত্রবধূর হারানোর শোকে দুঃখে কাতরতায় বুক চাপড়াতে চাপড়াতে তিনি বাড়ি ছেড়ে কোথায় যে চলে গেলেন, আর ফিরে আসেন নি। হয়তো পথেঘাটেই কোথাও মৃত্যুবরণ করেছেন, তা কেউ জানে না! তবু বিশ্বাস হয় না দিব্যেন্দুর। কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
ওদিকে দিব্যেন্দুর গর্ভধারিনী বৃদ্ধা মা রমলা দেবী তার একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারানোর শোকে দুঃখে কাতরতায় তিনি মুহ্যমান হয়ে পড়লেও তাঁর বুঝতে বাকি থাকে না যে, এসবই ভাস্করের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র। কিন্তু তখন তিনি অসহায়, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অপারগতার কারণে মানসিকভাবে একেবারে ভেঙ্গে পড়েন। তাঁর শূন্য বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বাড়ি ছেড়ে সেই যে বেরিয়ে গেছেন, আর ফিরে আসেন নি। হয়তো পথেঘাটেই কোথাও মৃত্যু বরণ করেছেন, কে জানে!
হঠাৎ ভবানীচরণ দাস সদর দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন বাইরে। এসে দ্যাখেন, স্ত্রীর হুইল চেয়ারের হাথল ধরে দিব্যেন্দু তখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। ভেবে কূল পায় না, কোনদিকে যাবে? কোথায় যাবে? কিভাবে শেষ থেকে পুনরায় জীবন শুরু করবে। ততক্ষণে ভবানীচরণ দাসের একটু একটু করে বোধগম্য হতে থাকে। লোকের কানাঘুষোয় ঘটনার কিছু কিছু অংশ তারও শ্রুতিগাচর হয়েছিল। কিন্তু কখনো মাথা ঘামান নি। তলিয়ে দ্যাখেন নি।
৩
পরবর্তীতে রায়চৌধুরী দম্পতীর জীবননদীর খেয়া পুনরায় বাইতে শুরু করে ঠিকই কিন্তু প্রাণবন্ত মালবিকার চোখের তারাদু’টিতে খুশীর ঝিলিক আর কি দেখতে পাবে কোনোদিন? ওর উচ্ছাসিত হাসির ফোয়ারা আর কি শুনতে পাবে কো্নোদিন? ওর সুস্থ সবল পরিপূর্ণ শরীর ফিরিয়ে দিতে পারবে কোনোদিন? হুইল-চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে পারবে কোনদিন? পারবে দিব্যেন্দু সব ফিরিয়ে দিতে? না পারবে না। কোনোদিন আর ফিরে আসবে না। শুধু নীরব নির্বিকারে বুকের মাঝারে জমে থাকবে একরাশ ব্যথা-বেদনা। না বলা কিছু কথা। কথার আলাপন। আর অহরহ কানে বাজবে, খুশীর বন্যায় প্লাবিত করে ভ্রমরের মতো ভেসে বেড়ানো মালবিকার গুন গুন গুঞ্জরণে অপূর্ব সুরের মূছর্ণা।
মনে মনে বিড় বিড় করে ওঠে দিব্যেন্দু,-কিচ্ছু ভেবো না মলি, আমি অঙ্গীকার বদ্ধ। আমার অকুণ্ঠ হৃদয়ের উজার করা নীরব ভালোবাসায় তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দৃঢ় অঙ্গীকারে আমার বুকের সমস্ত কষ্টগুলি যতোই বেদনাময় হোক, সর্বদা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবো শুধুমাত্র অতীতের স্মৃতিবিজরিত তোমার লাবণ্যময়ী মুখের সেই উদ্ভাসিত একছটাক অনিন্দ্য সুন্দর হাসির শব্দ তরঙ্গে। যা আমরণ গেঁথে রাখবো আমার হ্রদয়কোটরে, এক অদৃশ্য অনুভূতিতে।
স্ত্রীর অলক্ষ্যে পলকমাত্র দৃষ্টিপাতে দিব্যেন্দু লক্ষ্য করে, মন-প্রাণ সারাশরীর বিষন্নতায় ছেয়ে গিয়েছে মালবিকার। কয়েক মাসেই অনেক বুড়িয়ে গেছে। চোখমুখ শুকিয়ে মলিন হয়ে ওকে পুতুলের মতো দেখাচ্ছে। কি যেন ভাবছে মালবিকা।
তখন কি চরম বিপর্যয় দিব্যেন্দুর। অক্টোপাশের মতো অজানা বিভীষিকায় ওকে চারিধারে আঁকড়ে ধরে। অপর দিকে আচমকা জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে পঙ্গুত্বের গ্লানিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে একদমই ভেঙ্গে পড়েছে মালবিকা। তন্মধ্যে দুঃস্বপ্নের মতো “শান্তি কূটির” এর মালিকানা হারিয়ে সর্বস্ব নিঃশ্ব হয়ে, সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার দুঃসংবাদে মাথায় যেন বজ্রাঘাত পড়ে। বিকৃতি চেহারা আর বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে উচ্ছাসহীন, আবেগহীন মালবিকা নিথর নির্জীব প্রাণীর মতো সারাদিন উদাসীন্যতায় অন্যমনস্ক হয়ে হুইলচেয়ারে বসে থাকে। জীবনে আশা, আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস, ভরসা কিছুই আর নেই। নেই ইচ্ছে, আবেগ, অনুভূতি, বেঁচে থাকার সাধ। অবসন্ন হ্যাথাতুর শরীরটা বহন করবার মতোও শক্তি নেই মালবিকার। সারাদিন এসব ভেবে ভেবে বুকের ভিতরের সমস্ত কষ্ট বেদনাগুলি তরল হয়ে দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় ঝড়তে থাকে। পারে না সম্বরণ করতে। ক্ষোভে, দুঃখে শোকে বিহবলে হঠাৎ দিব্যেন্দুকে জড়িয়ে ধরে মুখ গুঁজে হুহু করে কেঁদে ওঠে।
বেদনাহত বিমূঢ়-ম্লান দিব্যেন্দু পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শান্তনা দেবার মতো একটা শব্দ আর উচ্চারিত হয় না। কোনো বিকার নেই। প্রতিক্রিয়া নেই। আজ কি বলে শান্তনা দেবে সে! কখনো কি ভাবতে পেরেছিল, জীবন জোয়ারে সুখের তরীতে ভাসতে ভাসতে একদিন আচমকা তরীখানা অতল তলে তলিয়ে যাবে! যেখানে কূল নেই। কিনারা নেই। বেঁচে থাকারও কোনো অবলম্বণ নেই।
হঠাৎ ওর গভীর সংবেদনশীল দৃষ্টি বিনিময় হতেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে দিব্যেন্দুর। ভারাক্রন্ত হৃদয়ে সেদিনের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ঙ্কর রাত্রির হ্রদয়বিদারক, যন্ত্রণাদায়ক গহীন বেদানুভূতির তীব্র দংশণে মস্তিস্কের সমস্ত স্নায়ূকোষগুলিকে বাব বার কুঁরে কুঁরে খেতে লাগলো। অত্যন্ত পীড়া দিতে লাগলো ওর মুমূর্ষ্য হৃদয়কে। হতাশ আর শূন্যতায় বুকটা খা খা করে ওঠে। অনুতাপ আর অনুশোচনার অন্ত নেই। দায়ী করে নিজেকে। মাথাকূটে মরে, সেদিন কেন বাড়ি ছেড়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে ছিল? কেন বেড়াতে বেরিয়ে ছিল? আজ একটু একটু করে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ওর মনের শক্তি। বুকের পাঁজরখানাও ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গিয়েছে। গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। মালবিকার মুখের দিকে আজ চোখ তুলে তাকানো যাচ্ছে না। এ কেমন বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাস, বিড়ম্বণা, ছলনা, প্রবঞ্চনা!
প্রিয়তমা পত্নী, অর্ধাঙ্গিনী, মালবিকাই যে ছিল, চির অম্লান, চির সজীব, শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমনীয় এক উদ্বিগ্ন যৌবনা অনন্যা, লাবণ্যা, প্রেমের মহিমায় দ্বীপ্ত মমতাময়ী এক বিদূষী নারী, হৃদয়হরিনী। যে ছিল দিব্যেন্দুর নিবেদিত প্রাণ, শক্তির উৎস, প্রেরণা, ভাই-বন্ধু-প্রেয়সী সব। যেকথা আজও বলা হয়নি। বলতে পারেনি দিব্যেন্দু। হয়তো বলাও হবে না কোনদিন। যা মালবিকা কোনদিন আর জানবে না। শুধু যন্ত্রের মতোই রয়ে যাবে দুজনে।
কিন্তু মানুষের জীবন নদীর প্রবাহ কখনো একই স্থানে থেমে থাকে না। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এগিয়ে চলে আপন ঠিকানায়। তদ্রুপ সময়ের নির্মমতা কাঁধে চেপে বিকলাঙ্গ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দিব্যেন্দুও শুরু করে নতুন জীবন ধারা। বদলে যায় ওর প্রাত্যহিক জীবনের কর্মসূচী, অচেনা অজানা জায়গা। নিত্য নতুন অপরিচিত মানুষের আনাগোনা। যেখানকার পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে চলা তাদের পক্ষে ছিল অত্যন্ত দুস্কর। যেন প্রাণহীন সংসার। সুখ নেই, আনন্দ নেই, রূপ নেই, রঙ নেই। কেমন নিরস, নিস্প্রেম, নিরুচ্ছাস দাম্পত্য জীবন। তবু জীবন ও জীবিকার তাগিদে পুনরায় বাসা বাঁধে। বাসার এককোণায় ছোট্ট একটা ক্লিনিক ওপেন করে। সেখানেই সকাল বিকাল দুইবেলা রুগী দ্যাখে দিব্যেন্দু। তাতে যা উপার্জন হয়, বাড়ি ভাড়া দিয়ে একরকম দিন কেটে যাচ্ছিল।
হঠাৎ একদিন এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক কাশতে কাশতে দিব্যেন্দুর ক্লিনিকে এসে উপস্থিত হয়।-‘আসতে পারি ডাক্তার বাবু?’
বলে ভদ্রলোক নিজেই সরাসরি দিব্যেন্দুর চেম্বারে ঢুকে একটা চেয়ারে বসে পড়ে। ভদ্রলোকটির একগাল পাকা দাড়ি। মাথার চুল এলোমেলো। পড়নের জামা কাপড়ের অবস্থাও তদ্রুপ। মলিনতার ছাপ প্রকট। খুবই অসুস্থ দেখাচ্ছে।
খানিকটা বিস্ময় নিয়ে ওর আপাদমস্তক নজর বুলিয়ে দিব্যেন্দু বলল,-‘আপনি বসুন। আমি এখুনিই আসছি।’ বলে ঘরের ভিতর চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর এসে দ্যাখে, ভদ্রলোকটি চেম্বারে নেই। সামনে টেবিলের উপর একটি বাদামি রঙের বাইন্ডার পড়ে আছে। তাতে কিছু কাগজপত্র দড়ি দিয়ে বাঁধা। আশ্চর্য্য, ভদ্রলোক এসে গেল কোথায়? ওয়েটিং রুমেও নেই। ভেরী ইন্টারেষ্টটিং!
দিব্যেন্দু নিজের মনে বিড় বিড় করতে করতে বাইন্ডারটা হাতে নিয়ে খুলে দ্যাখে, ঐ বাইন্ডারে ওর অধিকার চ্যুত “শান্তি কুটির” এর দলিলপত্র সহ ওর বিষয় সম্পত্তির বৈধ মালিকানার প্রমাণপত্র। সেই সাথে একটি লম্বা চিঠি। তাতে লেখা,
সুপ্রিয় বন্ধুবরেষু দেব,
কি বলে যে নিজের পরিচয় দেবো আমার জানা নেই। চেয়েছিলাম, নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থী হয়ে তোর সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াবো। কিন্তু সেই স্পর্ধা আজ আমার নেই। ক্ষমার অযোগ্য জেনেও না লিখে পারলাম না। যেদিন জানলাম তোরা দুজনেই জীবিত এবং সশরীরে ফিরে এসেছিস, সেদিন থেকেই অনুতাপ অনুশোচনায় ডাঙ্গায় ওঠা মাছের মতো ছটফট করেছি শুধু তোর বিষয় সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবার জন্যে। যেদিন লোভ লালসায় নানান প্রলোভনের হাতছানি উপেক্ষা করতে না পেরে নিজের সততা এবং সত্যকে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যার কাছে আত্মবিক্রয়, লোভের কাছে নতিস্বীকার এবং ভোগের কাছে বশ্যতা স্বীকার হয়ে আমায় সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করে ফেলেছিল, সেদিন একটিবারও মনে হয়নি যে, আমার বন্ধুবরেষু দিব্যেন্দু ও তার স্ত্রী জীবিত। কখনো ভাবিনি তার অমায়িক আন্তরিকতার অনবদ্য সান্নিধ্য আবার ফিরে পাবো। তোর বিষয় সম্পত্তি কিছুই নড় চড় হয়নি। বাড়ির নক্সা খানিকটা বদলে গেলেও নামের সংশোধন করা হয়েছে। তোর “শান্তি কুটির” নামকরণটির পূণর্জনম হয়েছে।
ভবানীচরণ দাস অন্য কেউই নয়, সে আমার ভগ্নিপতীর বড়ভাই। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। মৃত্যু শয্যায়। অস্তাচলে ডুবে যাওয়া সূর্য্যের মতো জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাসের প্রহর গুনছেন। কিন্তু মাসিমার সেবা-শুশ্রুষা এবং ওনার তত্ত্বাবধানে কোনো ক্রুটিই আমি রাখিনি। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও উনি আজও জীবিত এবং কৃষ্ণনগরে বৃদ্ধাশ্রমে সজ্ঞানে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তোদের সুখ শান্তি, আনন্দ সম্পূর্ণ ফিরিয়ে দিতে পারলে অন্তত কিছুটা হলেও পাপ কর্ম থেকে মুক্ত হতে পারবো। যদি সম্ভব হয়, আমায় ক্ষমা করিস।
ইতি-ভাস্কর
চিঠিটা পড়া মাত্র মরিয়া হয়ে উর্দ্ধঃশ্বাসে মায়ের কাছে ছুটে যায় দিব্যেন্দু। গিয়ে দ্যাখে, আরাম কেদারায় বসে দিব্যি পান চিবোচ্ছেন রমলা দেবী। পিছনের বারান্দার রেলিংএ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভাস্কর। আচমকা দিব্যেন্দুর গলার আওয়াজ কর্ণগোচর হতেই চমকে ওঠে। এখন ও’ মুখ দেখাবে কেমন করে! পালাবার আর রাস্তা নেই। লজ্জায় অপমানে মুখ লুকোবার চেষ্টা করে। ওকে দেখতে পেয়ে দ্রুত এগিয়ে আসে দিব্যেন্দু। অভিমান ভরা কণ্ঠে বলল,-‘দেখা না করেই চলে এলি ইডি্যেট। চেহারার এ কি হাল করে রেখেছিস? তোকে তো চেনাই যাচ্ছেনা। লজ্জা পাচ্ছিস কেন! মনে কষ্ট পেলেও আজ আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। অনুযোগ নেই।
আসলে সব আমাদের অদৃষ্ট। তা না হলে হঠাৎ সমুদ্র-সৈকতেই বা যাবো কেন বল! কপালে দুর্ভোগ থাকলে ঠেকাবার সাধ্য কার! শুধু দুঃখ এইটুকুই, পঙ্গুত্ব নিয়ে মালবিকা আজ হুইল-চেয়ারে পড়ে আছে। ওর মুখের দিকে তাকানো যায় না। সড়ক দুর্ঘটনায় পা-দুটো হারিয়ে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে। মুখে কথা নেই, হাসি নেই। নেই জীবনে নতুন কোনো স্বপ্ন, ইচ্ছা-আবেগ-অনুভূতি, কিছুই নেই। কি করে যে বাকী জীবনটা কাটাবো, বুঝতে পারছি না।’
ভাস্কর তখনও নিরুত্তর। বলবার মতো কোনো শব্দই আর খুঁজে পায় না। ক্ষমা প্রার্থীর ন্যায় অশ্রুসিক্ত চোখে মাথা হেট করে থাকে। দিব্যেন্দু ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,-‘ষ্টুপিড, আমায় কি তোর পায়ে ধরতে হবে?’
তক্ষুণি দিব্যেন্দুকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে ভাস্কর।
টরোন্টো, কানাডা