লোকসংগীত শিল্পী আব্দুল আলীমের ৪৭তম প্রয়াণ দিনে আমাদের প্রাণঢালা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা
‘আর কত কাল ভাসব আমি’, ‘শোনো গো রূপসী কন্যা’, ‘বাবু সেলাম বারে বার’, ‘পরের জায়গা পরের জমি’সহ বহু জননন্দিত লোকগানের শিল্পী আবদুল আলীম। আধ্যাত্মিক, মরমি ও মুর্শিদি গানের জন্য অমর হয়ে আছেন আবদুল আলীম। তাঁকে স্মরণীয় করে রাখতে অবশেষে তাঁর নামে একটি উড়ালসড়কের নামকরণের আবেদন জানিয়েছে শিল্পীর পরিবার। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে। শিগগিরই ঢাকার একটি উড়ালসড়কের নামকরণ করা হবে শিল্পীর নামে।
রোববার শিল্পী আবদুল আলীমের ৪৭তম প্রয়াণ বার্ষিকী। এ উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার বৈশাখী টিভিতে তাঁর গান শোনাবেন শিল্পীর তিন ছেলেমেয়ে আজগর আলীম, জহির আলীম ও নূরজাহান আলীম। বাবার জনপ্রিয় বেশ কিছু গান গেয়ে শোনাবেন তাঁরা। পাশাপাশি বাবাকে নিয়ে করবেন স্মৃতিচারণা। ৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বৈশাখী ফোক লাইভে রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে সরাসরি অনুষ্ঠানে থাকবেন তাঁরা।
নূরজাহান আলীম জানান, তাঁর বাবার গানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সংগ্রহ করা গেছে সাড়ে তিন শ। তিনি বলেন, ‘বাবার অনেক গান আছে করাচি রেডিওতে। অনেক গানের রেকর্ড নষ্ট হতে বসেছে। আমরা সেসব দেশে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রেও সরকারের সহযোগিতা দরকার।’ বাবার নামে সড়কের নামকরণ প্রসঙ্গে নূরজাহান বলেন, ‘বাবার নামে এত বছরেও কোনো কিছুর নাম করা হয়নি। এতকাল পর আমরা খিলগাঁও ফ্লাইওভারটি বাবার নামে করার অনুরোধ জানিয়েছি। সরকারের কাছ থেকে সাড়াও পেয়েছি। আশা করছি শিগগিরই তাঁরা বাবার নামে ফ্লাইওভারটির নামকরণ করবেন।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন আবদুল আলীম। ছোটবেলায় তাঁর সংগীতগুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন পালা–পার্বণে লোকসংগীত গেয়ে জনপ্রিয় হন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বের হয় তাঁর প্রথম রেকর্ড। গান দুটি হলো ‘তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ‘আফতাব আলী বসল পথে’। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড ছিল সত্যিই বিস্ময়কর।
দেশভাগের পরে আবদুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও গাইতে শুরু করেন। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে গান করেছেন আবদুল আলীম। আবদুল আলীমের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘লালন ফকির’। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
আবদুল আলীম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও ছাড়া দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। শিল্পীর ৫০০ গান রেকর্ড হয়েছে, এ ছাড়া স্টুডিও রেকর্ডেও রয়েছে অনেক গান। তাঁর অবিস্মরণীয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘যার আপন খবর আপনার হয় না’, ‘নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা’, ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, ‘হলুদিয়া পাখি’, ‘মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘দোল দোল দুলুনি’, ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’, ‘কেনবা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ’, ‘মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়’, ‘কেহ করে বেচাকেনা কেহ কান্দে’, ‘সব সখী রে পার করিতে নেব আনা আনা’ প্রভৃতি।
আবদুল আলীম ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।