কবিতাগুচ্ছ:
কামরুন নাহার
কথোপকথন
এই ছেলেটা
একটু দাড়া
নাম কিরে তোর!
আমার নাম!
সোনার তরী
এই যে নদী…
তার ওপারেই আমার বাড়ি।
কিন্ত তুমি…
এই এ বেলা যাচ্ছো কোথায়?
কে ভাই তুমি?
আমি!
আমি হলাম মেঘ দুলালী
মেঘের রাজ্যে আমার বাড়ি।
বাঃ!
নামতো তোমার মিষ্টি ভারী।
তুমি কি সেই!
যে গগন কাঁপায়
বৃষ্টি ঝরায়
হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়ায়
বজ্র হয়ে ঝড়ে পড়ে!
আর চারিদিক ভাসিয়ে নেয়!
আহ্! তুই তো বেশ কথায় পটু!
ঝগড়া করিস পা বাড়িয়ে
এমন করে বলতে আছে!
আমি হলাম;
কৃষক মায়ের মুখের হাসি।
বর্ষা দিনের প্রথম কদম
কিশোরীদের উচ্ছ্বসিত উচ্ছলতা
বৃষ্টি ভেজা…
যা যা তোর ভাষায় ওই তো আমি।
ভীষণ রাগী আর আকাশ কাঁদাই।
হ্যা, হ্যা যাচ্ছি তো তাই
তুমি ডাকছো!
তাই কি আমায় থামতে হবে?
আমার কত কাজ রয়েছে
হাঁটছি আমি দেখছো না কো!
দেখছি তোরে…
তবে পারছি নাতো তাল মেলাতে।
তুই যে তরুণ
উদ্দাম এক প্রান ঐশ্বর্য
আমার বয়স শত বর্ষ
তোর সাথে কি পারি বল!
আচ্ছা তবে বিদায় নিলাম
তুই চলে যা তোরই পথে
এবার আমি বাঁক নেবো যে
তোর পথে আর যাবো না
তুই চলে যা সোনার তরী
ভালো থাকিস।
আমার কথা মনে রাখিস
প্রয়োজনে আমায় ডাকিস
মনে থাকবে!
সন্ধ্যা হলো
আসতে পথে
আবার পিছু
ডাকছে কে যে!
এই ছেলেটা
যাচ্ছো কোথায়?
দাড়াও না ক্ষণ!
আমি হলাম সোনার তরী
এই যে নদী তার ওপারেই আমার বাড়ি।
কেনো ডাকছো এমন করে!
কে গো তুমি?
এই নিঝুম রাতে অন্ধকারে
ডাকছো আমায় বারেবারে।
আমি হলাম…
জোনাক পোকা
রাতের বেলায়ই জেগে থাকা
হঠাৎ করে
তোমায় একা চলতে দেখা
ইচ্ছে হলো সাথী হতে
তোমার পাশে আলো জ্বেলে
তোমার হাতে হাতটি রাখার।
রাগছো কেনো?
রাগবো না!
সকাল বেলা আসতে পথে
পথ কাটলো মেঘ দুলালী
চললো আমার সাথে সাথে
গল্প জুড়ে সারাটা পথ
হাটলো আমার পাশে পাশে
দিন গড়িয়ে রাত্রি এলো
তাও তারে ভুলছি না যে
মন টা যে তাই ভীষণ খারাপ।
তাই ভেবেছি চলবো একা
করবো না আর গল্প কোন।
দেবো না হাত
একাই হাঁটো!
আমি হলাম
সোনার তরী…
যে একাই আসে
ওপার থেকে
মিষ্টি হেসে একটু ক্ষণ
গল্প করে
ফের চলে যায়…
যেই পারেতে নিজের বাড়ি।
ভালো থেকো জোনাক পোকা
রাতেই জ্বেলো তোমার পাখা
অন্ধকারে পথিক মনে আলো দিও।
ভালো থেকো।
বিদায় জেনো।
খোকার খানা
কি যে খেতে মিষ্টি
জুতো আর বালতি
বুঝবে তা কেউ কি!
খোকা ছাড়া কে জানে!
পেলে জুতো চেটে নিই
আহা! কি যে মিষ্টি।
দুধভাত দূরছাই
ওটা কেউ খায় কি!
খোকা জানে কোনটাকে
খেতে হয় চেটে চেটে
কোনটার স্বাদ হয় বেমালুম মিষ্টি।
টক, ঝাল বুঝি নাকো
দুধ, সাগু খাই নাকো
খেতে চাই সুস্বাদু প্লাস্টিক।
হতে পারে পাঞ্চ ক্লিব
টুল কিবা প্যাকেটিং
প্লাস্টিক বক্স ভারি প্রিয় যে।
খোকা তাই রোজ খায়
হেসে কুটি কুটি হয়
স্যান্ডেল খেতে কি মজা যে!
জুতো সব পাহারায়
ঘর ছেড়ে রাস্তায়
মা দেখে টান দিয়ে
হাত থেকে নিয়ে যায়
কি যে লাগে অসহায়
তোমরা তা জানো কি!
মা যদি বুঝতো
হয়তো তাহলে সে
চেখে নিয়ে দেখতো।
তাই ভেবে খোকা কাঁদে
তাকায় কি অসহায়!
তাকে দেখে মনে মনে
কি ভীষণ মায়া হয়।
মেঘের রাজ্যে
এই যে জীবন
মেঘের মতো
উড়িয়ে নিচ্ছে দিনগুলোকে!
কই!
হাত দিলে তো পাই না ছুঁতে-
কেবলই হারায় অজানাতে।
মেঘ যেমন পালিয় বেড়ায়
সময়ও তেমন হারিয়ে গড়ায়
দিন থেকে রাত সন্ধ্যা ধারায়
মেঘের রাজ্যে কেবলই অতীত।
যা গগণ কাঁপায়,
জোছনা ঝরায়
বৃষ্টি নামায়
দুপুর থামায়।
যেন মাতাল আবেগে
উড়িয়ে নেয় ঘুড়ির মতো।
জোছনা ঝরার কাব্য
তোমার আকাশে ঝিঁঝিঁপোকা ওড়ে
বসন্ত বিরাগভাজন।
রাত নামে নামে, আঁধার ঘনায়
কুয়াশা ভেজা ভোর।
আমি রাত ঘুমে নীরব দহনে
ফিরি না ফেরার শহরে।
দাঁড়কাক যেন চিল হয়ে যায়
দূর সে গগনতলে।
তবু যেন প্রেম গল্প ছড়ায়
নীরব নিভৃত রাতে।
ঘাসফড়িং এর গল্পগুলো সবুজ শ্যামল
কালো মেঘের আয়নাগুলো
ঠিক তেমনিই।
জোসনা ঝরার কাব্য আমি আর লিখি না।
মনের প্রদীপ অন্ধকারেই ভীষণ ভালো।
লাল টিপ আর সিদুর আঁকা রমণীকুল
আমার চিত্রে আর আঁকি না।
বন্ধ্যা নারীর ব্যকুল দুচোখ ভাসে কেবল।
স্মৃতির পেয়ালা আকড়ে যেন বাঁচি কেবল।
সুখ সেতো দুঃখ নদীর ওপার গেছে।
আছি কেবল জোয়ার জলের প্রত্যাশাতে।
তোমার আকাশ চড়ুই হলে খবর দিও।
ফুল, বসন্ত এলে, আমায় ঠিক জানিও।
আমি আবার ঘাস হয়ে ছড়িয়ে যাবো।
ভেবো না, তোমায় ঠিক রাঙিয়ে যাবো।
কাক চিলেদের উড়িয়ে সেথায়
বাঁধবো দুজন ঘর।
হেসে খেলে জীবন কখন ফুরিয়ে যাবে
তার রাখবোই না খবর!
কে তুমি?
কে তুমি?
আমি প্রেম
যা কিনা…
এক মাতাল করা উদাস হাওয়া
প্রবল তোড়ে উড়িয়ে নেয়
জলের স্রোতে ভাসিয়ে নেয়
উত্তাল এক মাদকতা।
তুমি কে?
আমি নারী
যা তোমার চোখে
সদা প্রেয়সী
প্রেমে পড়ার প্রথম দাবী
যে উদাস করে
স্বপ্ন কাড়ে
পাগল করে
হাওয়ায় আবার মিলিয়ে যায়
মেঘের মতো।