আজ কথাসাহিত্যিক জসিম মল্লিক-এর জন্মদিন, শুভেচ্ছা নিরন্তর।
এক নজরে লেখক পরিচিতি:
জসিম মল্লিক। জন্মঃ ১৭ মার্চ ১৯৬১, বরিশাল, বাংলাদেশ।
কথাসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। জীবন যে এক আশ্চর্য্য গল্প, বয়ান; জসিম মল্লিক তার নিপুণ কারিগর। যে জীবনকে নিবারন করা যায় না, অনিবার্য; জসিম সেই কাহিনীই তুলে ধরেন। গভীর বোধ, বেদনা আর বিহলতা না থাকলে জীবনকে কতটুকুই বা বোঝা যায়। বোঝে মানুষ? হয়তো তা বুঝতেই জসিম ছুটে যান বরিশাল থেকে টরন্টো, নিউইয়র্ক থেকে লসএঞ্জেলেস, কোলকাতা থেকে ওয়াশিংটন ডিসি , আবার লন্ডন থেকে ডালাস। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ডানা ঝাপটানো পাখির মতোন। এই বয়ে চলা, উড়ে চলাই তাকে ঋদ্ধ করেছে, জীবনের বোধ ও গভীরতায় করেছে সমৃদ্ধ। তাই হতাশাকে প্রশ্রয় দেন না তিনি। জসিমের লেখায় ও যাপনে তাই ফুটে উঠে। কেননা জসিম জানেন, জীবন মানেই ব্যর্থতা না, সেখানে সফলতাও আছে, শুধু ব্যর্থ বলে কোন জীবন নেই। তা তিনি বিশ্বাসও করেন না। তাই জসিমের চরিত্ররা হারতে হারতে জিতে যায, জিততে জিততে হেরে যায়। কিন্তু সেই হেরে যাওয়াটা সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর উজানে মৃত্যুর মতো। পাওলো কোয়েলহোর আবার তল থেকে উঠে আসার মতো, হারাকু মুরাকামির ভাঙচুর ভাঙচুর শব্দের মধ্যেও জয়ের প্রবল স্বপ্ন। বিশ্ব ভূগোলের অভিজ্ঞতা ও বাসীন্দা তিনি। তাই তার কাহিনী, চরিত্র নির্দিষ্ট কোন ভূগোল নির্দেশ করে না। তাই তার বলা রাঢ়িখালের মেয়েটির গল্প হয়ে উঠে টরন্টোর জেনিফারের গল্প। এই যে স্পর্শ বিন্দুকে ছুঁয়ে যাওয়া ও এক হওয়া-এটাই লেখককে বৈশ্বিক মর্যাদা দেয়। আন্তর্জাতিকতায় জসিম মল্লিক তাই ভিন্নধারার এক কাহিনীকথক। স্বতন্ত্র, বলিষ্ট, উচ্চ মার্গীয়।
দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখি ও সাংবাদিকতার জীবনে তাঁর অভিজ্ঞতা বিপুল ও বিশাল। এই বিশাল অভিজ্ঞতার উপদান নিয়েই তিনি নির্মাণ করেছেন অসংখ্য গল্প উপন্যাস এবং সমাজ সচেতন মূলক বিভিন্ন লেখা। এ পর্যন্ত প্রায় ৪২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকপ্রিয় এই লেখকের সব বই-ই দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনী থেকে প্রকশিত হয়েছে। তারমধ্যে আছে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও স্মৃতিকথার বই। তুলে এনেছেন জীবনের চরম সত্য আর বাস্ততাকে। তাঁর সপ্রতিভ, ঋজু, সংহত, সংবেদী ভাষা আর বিষয় বৈচিত্রের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা বরাবরই লক্ষযোগ্য। সাধারণতঃ তিনি সামাজিক এবং সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। মানুষের সম্পর্কের যে মনোজাগতিক বিষয় আছে সেটাকে তিনি অনুপঙ্খভাবে তুলে আনেন তার লেখায়। এছাড়া প্রকৃতি, নদী আর গ্রাম তার লেখার বেশিরভাগ জুড়ে থাকে। জনিপ্রয় কথাসাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে আমন্ত্রিত হয়েছেন, বক্ততা করেছেন। ভৌগলিক রেখা আর সীমানায় বিশ্বাস করেন না বলেই হয়তো জসিম মানুষকে আশ্চর্য্য ছুঁতে পারেন।
জসিম মল্লিক বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং বরিশাল ক্লাবের আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির শিক্ষা ও গবেষনা সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে কানাডার টরন্টোতে বসবাস করছেন। জসিম মল্লিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। দেশের জনপ্রিয় নিউজ ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও সাপ্তাহিক২০০০ এ ১৯৮৩ সাল থেকে সাংবাদিকতা করেছেন। টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ভোরের আলো, বাংলা কাগজ, দেশের আলো, বাংলা মেইল ও প্রবাসী কন্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেছেন। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় প্রথম আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন। নিউইয়র্কের ঠিকানা ও বাংলাদেশের দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার কানাডা প্রতিনিধি হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। টরন্টো বইমেলার অন্যতম আয়োজক। এছাড়া একুশে গ্রন্থমেলা, নিউইয়র্ক বইমেলা, কোলকাতা বইমেলায় নিয়মিত যোগ দেন। ২০২২ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী।
আমরা এই গুণী সাহিত্যিকের জীবন আরো সমৃদ্ধ ও আলোকিত হোক। তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনায়।
১ Comment
Congratulations and best wishes.