কলঙ্কিনি: নাজনীন সুলতানা
ধারাবাহিক গল্প:
পর্ব: ০৩
দুদিন হচ্ছে খাওয়া-দাওয়ায় অনেক অরুচি হয়ছে।হৃদয়ের ফোন আর মেসেজের জন্য শুভ্রকে দিয়ে সিমটা পাল্টে ফেললাম। আরিয়ানের সাথে এখন টোটালি কথা বলা বন্ধ।
এখন নিজেকে বাঁচার উপযোগী করতে হবে।তাই শুভ্রকে বললাম আমাকে একটা চাকরি ম্যানেজ করে দিতে কিন্তু আন্টি এতে মানা করছে।কোন ভাবে বোঝাতেই পারছিনা আমি তাকে,,সে চায় আমি তার মেয়ের মতো তার পাশে থাকি বাট এই কথাটা আমায় সায় দিচ্ছেনা।
শুভ্র ও আন্টিকে বোঝাতে পারলো না,,তাই এখন বাড়ির রান্নার কাজ আমি নিসি কারণ আন্টি অনেক অসুস্থ।
বিকেলে,,,
বসে বসে ফোন গুতাচ্ছি,,,নিউ ফেসবুক আইডি খুললাম আগেরটা ডিলিট করে দিলাম।হঠাৎ আন্টি এসে হাজির।।আমার পাশে বসলো,,
আয়শাঃ কিছু বলবা
আন্টিঃ কিভাবে বলবো
আয়শাঃ এতো সংঙ্কোসবোধ করছো কেন বলো
আন্টিঃ তোর একটা বিয়ে করা দরকার আশু।
আয়েশঃ (আন্টির কথায় আমি ফোন থুয়ে তার দিকে তাকালাম) কে বিয়ে করবে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে
আন্টিঃ একজন রাজি হয়ছে,,,কিন্তু তুই রাজি হহ মা,,একটা মেয়ে একা থাকতে নেই তুই এখনো অল্প বয়সী কখন কি হয়ে যায় কে জানে
আয়শাঃ কিন্তু আন্টি,,আমি আর বিয়ে করতে চায়না,,বিয়ের সাধ মিটে গেছে আমার।
আন্টিঃ তুই এর আগে বিয়ে করেছিলি হৃদয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাও হৃদয়ের বন্ধু আরিয়ান কে।।
আয়শাঃ কিহহহ আরিয়ান হৃদয়ের বন্ধু (অবাক হয়ে) তুমি কি করে জানলে আর আমাকে কেন আগে বলোনি (নোনা জল পরতে লাগলো চোখ দিয়ে)
আন্টিঃ আমি জানলাম তোর বিয়ের ২ দিন আগে অনেক বার তোকে বলার চেষ্টা করেছি,,বাট তোর ওই সৎ মা তোর সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে দেয়নি।
আয়শাঃ তার মানে ওই মহিলা সব জানতো,,
আন্টিঃ হুম,,, ৪ লাক্ষ টাকা দিয়েছে এই কাজটা করার জন্য।হৃদয় এইদিয়ে চারজন মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।তিনজন মেয়েকে তাদের জালে ফাসিয়েছে আর এখন তুই বাকি।
সব শুনে যেন আমার শরীর অবশ হয়ে আসছে,, কেউ যেন গলা টিপে ধরছে আমাকে। এতোটাই কষ্ট হচ্ছে যে আন্টিকে কিছু প্রশ্ন করতে ভুলেই গেছি।
আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,আমার কষ্ট তিনিও সহ্য করতে পারছেনা।এই একটা মানুষ যে আমার মুখ দেখেই সব বুঝে যেতো।কেন এমন মানুষকে আমার মা হিসেবে পাঠালোনা?। আমি কিছুটা স্বাভাবিক হলাম
আয়শাঃ তুমি যেন কি বলতে গেছিলে
আন্টিঃ তুই শুভ্রকে বিয়ে কর
আমি আরেক দফা অবাক হলাম শুভ্রর নামটা শুনে।এতো শিক্ষিত ছেলে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করবে তাও আবার ৫ দিনের পরিচয়ে,,বিষয়টা খুব অদ্ভুত।
আন্টিঃ কি হলো কিছু বলছিস না যে
আয়শাঃ আমাকে একটু সময় দেও,, আন্টি।। আমি একটু ভাবতে চায়
আন্টিঃ শুভ্র রাজি,,, হুম ভাব কিন্তু ২/৩ দিনের মধ্যে। আমার হাতে ওতো সময় নেই
আয়শাঃ মানে
আন্টিঃ আরে,,, শুভ্র আবার বিদেশে যাবেনা,, তাই।আচ্ছা তুই চিন্তা কর আমি শুভ্রকে কফি দিয়ে আসি
আয়শাঃ আচ্ছা
এই বলে চলে গেলো আন্টি। আমার মাথায় হাজার চিন্তা চাপ দিলো।আমার সাথে যা যা হয়ছে তা তো আন্টি বা কাউকেই বলা হয়নি,,এগুলো বললে হয়তো রাজি হবেনা এগুলোই বলি তাকে। সে তো আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলেননা।।।
যখন সবাই ঘুমিয়ে পরলো তখন আমি তার রুমে গেলাম। রুম একবার খটখটাতে তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আয়শাঃ আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো
শুভ্রঃ ওও আসুন।
আয়শাঃ আপনার কি ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম।
শুভ্রঃ নাহহ আমি কাজ করছিলাম,, বলুন কি বলবেন
আয়শাঃ আপনি বিয়েতে রাজি হয়েছেন
শুভ্রঃ হুম,, কেনো।
আয়শাঃ আমি কিছু কথা বলতে চায় আমি
শুভ্রঃ হুম বলুন
আমি সব খুলে বললাম তাকে।বলতে বলতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি এসেছে খেয়াল করিনি।
আয়শাঃ আমি চায়না আপনার জীবনটা নষ্ট করতে,,আপনি যদি আন্টির কথায় রাজি হন তাহলে আমি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো
এই বলে আমি চলে আসতে লাগলাম তিনি পেছন থেকে ডাকলো।
শুভ্রঃ আমি এই বিয়ে রাজি আর এই নিন (একটা রুমাল এগিয়ে দিয়ে)
আমি তার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি এতো কিছুর পরও তিনি রাজি।আমার হাতে তিনি রুমাল ধরিয়ে চোখ মুছতে বললো।
শুভ্রঃ এতো কিছুতে আমি তোমার দোষ কোথাও খুঁজে পেলাম না।আমার মায়ের ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা,, তুমিও রাজি হয়ে যাও আমি সবোর্চ্চ দিয়ে তোমাকে আগের মতো করবো।
আয়শাঃ একটা মানুষ কি এতোটা ভালো হতে পারে,,আমার বিশ্বাসের বাইরে।কারণ আজ পর্যন্ত যাদের ভালো ভেবেছি তারাই আসল রুপ দেখাইছে। তাই একটা ভয় মনের ভেতর কুরে কুরে খাচ্ছে আমাকে (মনে মনে)
শুভ্রঃ জানেন আমার আম্মু কিন্তু ডিভোর্সি,, জানি না কি কারণ??কে আমার বাবা ছিলেন?? আমি আপনাকে বিয়ে করতে চায়,, কারণ আপনার তো কোন দোষ নেই আপনাকে আরেকটা সুযোগ পাওয়া উচিত,, বাকিটা আপনার ইচ্ছা।আমি চায় আপনি আপনার মতামতকে গুরুত্ব দিতে শিখেন (একটা হাসি দিয়ে) আর ঘুমিয়ে পড়ুন,, এসব বিষয়ে আর ভাবতে হবে না।
আমিও তারপর চলে আসলাম। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানা নেই।কেমন জানি শান্তি ফিল হচ্ছে।
সকালে,,
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে,, নিচে চলে আসলাম,, এসেই আন্টির একই প্যাচাল কি ভবলি বল।
আমিও বিয়েতে মত দিয়ে দিলাম।কেন রাজি হলাম তার কোন নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারবোনা। কেউ জানলে আমাকে নিয়ে সমালোচনা করবে কারণ ৩দিন আগে ডিভোর্স পেপারে সাইন করলাম আর ৫ দিনের পরিচয়ে একজনকে বিয়ে করবো।জানিনা ভাগ্য আমাকে আর কতো দূর অবদি টানবে।
আন্টি খুশির ঠেলাই আজই বিয়ে ঠিক করে দিলো রাতে,,,,
”
”
”
”
”
”
”
চলবে….
[{তো রিডার্স,,
আপনাদের কি মত,, শুভ্র এর সাথে কি আয়শার বিয়েটা দিয়ে দিবে??}]
১ Comment
congratulations