১) সুরমা আমায় ডাকছে কাছে
প্রাণে প্রবল টান লেগেছে, সুরমা আমায় ডাকছে কাছে
অতীত যেন বাঁধনহীন টানছে আমায় পিছে
ধ্যানমুগ্ধ মূর্চ্ছনা, বিরামহীন খেলায় মত্ত হয়েছে।
পাতার বিড়িতে সুখটান দিয়ে কেউ বা বাড়ি ফিরছে
উটের পিঠে সিনে-বিজ্ঞাপন, বাদ্য বাজনা বাজছে।
ডিঙির স্থান ইন্জিন নাও সগৌরবে নিয়েছে দখলে
সুরমার বুক বিদীর্ণ করে ছোটো ছোটো ঢেউ তুলে।
নদীর বিবশ বিলাপ, অসহায় শীর্ণ চোখ মেলে—
“চেয়ে দেখো, আমায় কেমন গতিহীন করেছে
এতটা দিন আসোনি, আমায় ভালোবাসনি।
সেই একাত্তরে এসেছিলে, আমার বুকে লুকিয়েছিলে।
আশ্রয় দিয়েছি আমি, ভালোবেসে যতন করেছি।
সব সত্য ভুলে গেছো, সবাই যেমন করে ভুলেছে”—
নৈঃশব্দের আধারে কথাগুলো বিমূর্ত হলো
অবচেতন মনে অব্যক্ত ব্যথার অনুভূতি নড়ে উঠলো।
অনেকটা চেতনাহীন আমি ত্রস্ত পায়ে এগুলাম।
সুরমা তীরের সেই দিনগুলো ধাওয়া করছে আমায়।
অতীত কেন অহেতুক হৃদয়ে নেশা জাগায় !
বিস্মৃতিগুলো সমগ্র স্বত্তা নিয়ে ঘিরে ফেলে আমায়।
ঢেউ তোলে, সুনামির মত, পুরনো কপাট খুলে যায়।
বুকের ভেতর বেদনার বিটোফেন মুহুর্মুহু ঝংকৃত হয়।
ঝাঁকে ঝাঁকে সোনালি চিলের মত একান্তে অন্তরঙ্গ হয়।
নষ্টালজিয়া জীবন্ত হয়ে ওঠে, কৃষ্ণচূড়া গাছটির আড়ালে।
কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া প্রেমিক হৃদয় নূপুর নিক্কন তোলে।
পালিয়ে যাওয়া সময়ের হাত ধরে নেশাগ্রস্তের মত আমি,
আবেগের জোনাক প্রজ্জ্বলন হয়, বিস্মরণ ব্যর্থতা আজীবন।
শান বাঁধানো বিশাল দীঘি।
পাড় ঘেঁষা আম, শিমুল উদ্যান।
শিমুলফুল দেখতে ভারী সুন্দর, পূর্ণ যৌবনা যুবতীর মতো প্রস্ফুটন।
আবির্ভূত হই সেই কবেকার টগবগে তরুণ যুবক আমি।
নদীর নামে নাম, সুরমা নামের উচ্ছল আকাঙ্খার যুবতী—
নদীর মতই যৌবনবতী, মেঘের ছায়ায় হাঁটে লাস্যমতি।
এতগুলো বছর পরও এমন দৃষ্টিভ্রম, এ কি !
অন্য কারো সুবোধ সুহাস ঘরনী সে এখন ।
অতিশয় ব্যস্ততায় রয়েছে, জীবনের ধর্ম পালন।
অবুঝ অবাধ্য হৃদয় বাঁধ মানে না,মানে না প্রবোধ।
“একবার যদি ফের মুখোমুখি সাক্ষাত হয়ে যায় !
যদি বলে,”বড় দেখে কয়টি কাঁচা আম পেড়ে দাও।”
আবির্ভূত ভাবনার নৈঃশব্দ ভাষা শুনি—
“তবে তোমার অরণ্য খোঁপার মালাখানি আমায় পরাও।”
ব্যথাকাতর আহত চোখ দুটি আজও ভুলিনি।
কখনও আর আম পেড়ে দেয়ার বায়না ধরেনি।
সুরমা যে অন্য কারো সযত্ন ললিত অর্ঘ্য ছিলো !
নীরব ব্যথার ব্যন্জনা তোলে,
কোন অধিলোকে আলো হয়ে জ্বলে।
২) বোহেমিয়ান নীল প্যাড
নীল প্যাডে প্রবাহিত বুঁদ হয়ে লেখা প্রেমপত্র।
অতিক্রান্ত দূরত্ব সরল রেখার অজ্ঞাত সমীকরণ লেখচিত্র।
শেষ দেখা হয়নি, চিতার অনলে নীল প্যাড প্রেম।
রোষ নেই, ক্ষোভ নেই, ভস্মটুকু বেদনার জলে মেশা কালো মেঘের ছায়া।
প্রতিদিন রোদ উঠে এই শহরে, শহরতলীর নদীতীরে
প্রতিরাত জোছনা ছুঁয়ে যায় নদীতীর কাশবন
এই শহরেই তুমি, স্বরচিত দিগন্ত উদ্যান।
সরল রেখার সমীকরণ লেখচিত্র নেই
দিগন্ত রেখায় উচ্ছ্বাস নেই, অবরুদ্ধ কষ্ট নেই
ভালোবাসার সৈকত নৈঃশব্দ শ্মশান, স্বপ্নিল শঙ্খচিল উড়োউড়ি নেই।
শেষ দেখা হয়নি, হাতিরঝিল, রবীন্দ্র সরোবর।
এই শহরে ঘ্রাণ নেই, এলো চুল হাওয়া নেই,
তোমার নীল শাড়ি বেদনার্ত আঁচল পাতা।
এই শহরে গোলাপ প্রস্ফুটন নেই, জোনাকের আলো নেই,
রাতের চিতায় ভোরের শিশির ফোটা।
তুমি নেই, নিসর্গ নেই, কঠিন প্রস্তর শিলা।
শীত বর্ষা বসন্ত নেই, উষ্ণতার উৎসব নেই।
বুঁদ হওয়া অব্যাহত পত্রলেখ নেই, কালো মেঘ ঝড়ের দিন
সাগরজলে নিমজ্জিত বোহেমিয়ান নীলপ্যাড।