টাপুর টুপুর বৃষ্টি
টাপুর টুপুর বৃষ্টির আওয়াজ
মিটে মনে গানের রেওয়াজ,
বৃষ্টির-পায়ে মল ছিলো আজ
করেছে সারাবেলা ধ্রুপদী নাচ।
জ্যৈষ্ঠের তাপদাহে অস্থির নাভিশ্বাস
ধরায় নেমেছে শান্তির আশ্বাস,
বৃষ্টির নূপুর বাজে মন-ময়ূরে
সন্ধ্যাতারা উঁকি দেয় স্ব-শরীরে।
স্মৃতির কামরায় রাগ-রাগিনী খেলে
বিরহের অস্তিত্বে চঞ্চলতা মেলে,
কাব্য-পাড়া প্রাণ পায় যতনে
চয়নমালা আবেগে জড়ায় সঙ্গোপনে।
বরিষণে প্রকৃতি সাজে রূপসী-অঙ্গে
বৃষ্টির টাপুর-টুপুর জলধারার সঙ্গে,
পানকৌড়ি ডাকে ঝিলের জলে
হাঁসগুলি পকপক করে সন্ধ্যাকালে।
খেয়া বায় মাজি-মাল্লার মেঘেতে
নাইওরি যায় বাপের বাড়ীতে,
দিগন্ত-প্রান্ত অনন্য সাজে সজ্জিত
বৃষ্টির টাপুর-টুপুর আওয়াজ মজ্জাতে।
অচৈতন্য নিমগ্নতা
নিস্তব্ধ আকাঙ্ক্ষারা নির্বিকার চিত্তে
মৌ বনের আবেদনময়ী মিষ্টি ঘ্রাণে আবিষ্ট;
কারু-শৈল্পিক প্রতীক্ষিত প্রহরগুলো অবসন্ন,
প্রেমাস্পন্দনের কলায় অচৈতন্য নিমগ্নতায়।
আধখানা চাঁদের আলো-আঁধারিতে খেলে
যায় ময়ূর পালকের নিবিড় ম্রিয়মাণ ওষ্ঠ চুম্বন;
এলোকেশী দেবী বিবাগী বৈরাগ্য বেশে অষ্টপ্রহরে
তপস্যায় মহামিলনের তন্দ্রায় আকণ্ঠ ডুবন্ত।
ভোরের কচি শিশির আহ্লাদে কিন্নর সুরে
গায় হে প্রেমপিয়াসী— নগ্ন আঁধার ত্যাগে
কুমারী কোমল রবিরশ্মি বিচ্ছুরিত ধরায়
এসো; তৃষিত হৃদি জুড়াও ধ্যান ভঙ্গ করে।
সুললিত দেহ-বল্লভ কম্পমান; আবেগী
মন্ত্রমুগ্ধ আহব্বানে মন নিঃশ্বাসের বায়ু ছাড়ে,
তৃপ্ততার অলঙ্করণে শীর্ষবিন্দুতে প্রাঞ্জলা গগনখানি;
মগ্নচৈতন্য শিষের প্রকোষ্ঠে চুম্বকত্ব নিঃসরণ!
স্নিগ্ধ প্রেমকাব্যে সঙ্গোপনে তন্দ্রাহারা প্রেমজঙ্ঘায় প্রস্ফুটিত মালতী লতার পত্র-রেনু;
প্রেম সৈকতে বালুকা ভেলায় নীল চাঁদোয়ায়
কুড়ায় শঙ্খের মনিমাল্য।
কোন অজানায়
রেখে গেলে স্মৃতির খন্ড-খন্ড মুক্তোর
সুরচ্ছেদ মালা– গহন আঁধারের ভেলায়,
কোনখানে,কোন্ ছায়াতলে অজানায়
মিশে গেলে অনন্ত গোধূলির মেলায়।
প্রেমের সাতকাহনে ভাসিয়েছো মন ডিঙা
রূপালী আবীর মেখেছো চাঁদের নয়নে,
সেই তো যাবেই চলে! দুটি হৃদয়ের
তৃষাতুর পরাগ-রেণু ফুটেছিলো স্বপ্ন চারণে।
ও আকাশ, ও বাতাস বলো কিছু কথা
দায় তো রয়েছে কিছু তোমারও সুপ্তব্যথায়,
কোন্ অজানায়, কোন অলকায় তুমি !
কিছু তো নেই বাকি আলাপনে, মোহময়তায়।
পড়ন্ত বেলায় কেকার গুঞ্জরণ কর্কশীয়
একা আমি বসে রই বেদনাক্ত ঘাঁটে,
শেফালী তলায় ফুলগুলো মুচকি হাসে
চাওনি কোন কিছু,রেখেছো শূন্যভাটে।
আত্ম প্রলাপের বিরম্বনায় বনের বৃক্ষ
মনের তাপে সরবে চিতায় ওঠে,
দূর সীমানায় কোন্ কালের অপেক্ষায়
দিগম্বরী মুষলধারা ঝরে প্রেম বিহারে।
ভাষার ঐশ্বর্যে ক্ষত
আত্মার রক্তক্ষরণে পেয়েছি মাতৃভাষা
অনন্য অনুভবে মুকুট বিহীন সম্রাট তুমি,
ঐশ্বর্য মণ্ডিত বাংলা ভাষা তার শিরোনাম
তবু পারিনা সযত্নে শিরোধার্য করতে চুমি।
মনোনিবেশনে দৃষ্টিগোচর হয় ক্ষতের চিহ্ন
বিরহে ভাষার ঐশ্বর্য ক্রন্দনরত নীরবে,
আদরে-সমাদরে বিজাতীয় ভাষা-কৃষ্টি!
দুর্মূল্য অলংকার সমৃদ্ধ মাতৃভাষা পিছনে।
ভাষা বাকরুদ্ধ নয়! প্রয়োজনে চিৎকারে
কয় কথা ইতিহাসের চলন সমীকরণে,
অসামঞ্জস্য তীরবিদ্ধ ক্ষত দূরীভূত করণ
যথা সম্ভব শীগ্রই সদা অনিবার্য স্বরণে।
মাতৃভাষা ঐশ্বর্য আবৃত অমূল্য সত্বেও
বোকার স্বর্গে থেকে আমরা ময়ূরপুচ্ছ
ধারণ করে পেখম মেলি নির্লজ্জের মত,
ধার করা ভাষা-সংস্কৃতির সাধনে
জাতি কখনো হয়না মহিয়ান-গরিয়ান,
অবশ্যম্ভাবী পরাহত।
ফাগুনের আগুন ঝরা বাতায়নে এখনো
ধ্বনিত হয় ভাষা শহীদের আত্ম ব্যথা,
শহীদ জননীর চোখের নীরের মূল্য দিবে কি
বাঙালী জাতীয় সত্তা?
প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
মাথা নিচু করে বাক হারিয়ে
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আত্মসম্মান,
আত্ম-অহংকার!
————–
কবি পরিচিতি
নাম: রেশমা বেগম,
পিতা: মোঃ মকবুল হোসেন সরকার (রিটায়ার্ড সরকারি কর্মকর্তা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) মাতা: মরহুম জাহান আরা বেগম।
জন্মস্থান: চাঁদপুর, মতলব থানা।
বিগত সময়ে আমি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম (গ্রুপ থিয়েটার )।
বর্তমানে কবিতা আবৃত্তিচর্চা ও রবীন্দ্র সংগীত চর্চায় নিয়োজিত আছি এবং পরিবেশনও করছি।
প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ-
“অন্তরালে মৃদু সুরবীণা” প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলায়।
দ্বিতীয় একক কাব্যগ্রন্থ
‘নুপুরের আওয়াজ’
প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলায়।
প্রায় ২৫ টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে লেখালেখির এই সময় পর্যন্ত।
লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি প্রায় তিন বছরের বেশি সময়।
বর্তমানে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছি।
আদি পৈত্রিক নিবাস-
চাঁদপুর জেলা, মতলব থানা।
বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা-
বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।