আমাদের শহীদ মিনার
ফরিদা বেগম 20/2/2021
ভোর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল কোকিলের ডাকে ,
মনে পড়ল এখন ফাল্গুন মাস
বাগানে ফুলের গন্ধ, প্রজাপতি, মৌমাছি আর পাখির কলতান, চারিদিকে একি আনন্দের আহ্বান
বসন্ত বরণ আর ভালবাসার ছড়া-ছড়ি,
এরই মাঝে কোথায় যেন বিষন্নতার সুর,
আর একদিন পরেই শহীদ দিবস
শৈশবে ঠিক এমনি দিনে ছেলেবেলায়,
ইট, কাদা আর মাটি দিয়ে তৈরি করেছি ছোট্ট শহীদ মিনার
আজও শহীদ স্মৃতিকে স্মরণ করে ছুটে যায় শহীদ মিনারে
এবার এক অন্যরকম অনুভূতি আমাদের শহরে
নির্মিত হয়েছে ,নগরের সবচেয়ে বড় শহীদ মিনার
আমাদের শহীদ মিনার
ঠিক একদিন পরেই নতুন সূর্যের আলোয়,
সবাই মিলে পায়ে পায়ে হেঁটে গাইবো সেই চিরচেনা গান
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি
শহীদ স্মৃতি কে আরো একবার স্স্মরণ করব বিনম্র শ্রদ্ধায়
সালাম,বরকত আসাদ, জব্বার দেখো আমরা তোমাদের ভুলিনি,
ভুলবো না কোনদিন
তোমাদের রক্তের দিন ঋণ শোধ করতে পারিনি,
তবে দিতে পেরেছি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্মান
ভালোবাসার ফাগুন
ফরিদা বেগম
14 /2 /2021
তুমি এলে আনন্দে উৎসবে মন ভরে যায়
তুমি এলে ফাগুন হাওয়া চুপি চুপি গান
গেয়ে যায় তুমি এলে
উৎসবে ভরে যায় সবুজ বন ভূমি ছায়
তুমি এলে মৌমাছি প্রজাপতি সুরে সুর ছন্দ ছড়ায়
তুমি এলে ডালে ডালে ফুলে ফুলে নূপুর বাজায়
তুমি এলে কোকিলের কুহুতানে ঘুম ভেঙে যায়
তুমি এলে মায়াবী জোসনা সুরভিত কিরণ ছড়ায়
তুমি এলে ভালোলাগা ভালোবাসা এক হয়ে যায়
হে সখি বিচ্ছেদ বলে কার নাম ভালোবাসা?
মা, আমার মা।
ফরিদা বেগম
মাকে নিয়ে ভাবছি আমি,
মা ছিল মোর মাথার মনি।
মায়ের মনটা ছিল বেজায় নরম ,
দিত মোদের সোহাগ পরম।
মায়ের স্নেহের ছিলনা অন্ত,
মা ছিল মোদের প্রেরণার মন্ত্র।
মায়ের গানের কোনো জুড়ি নেই,
সেই সুরের টানে হারিয়েছে খেই।
টাকা দিয়ে যায়না কেনা,
মায়ের স্নেহ, প্রীতি ভালোবাসা।
এখন মা মা বলে ডাকি যখন ,
মা তো দেখা দেয় না তখন।।
মা এখন দূর আকাশের তারা সেজে,
মিটিমিটি আলো জ্বালায় মনের মাঝে।।
হেমন্ত
ফরিদা বেগম
১৫/১০/২০২০
শরৎ শেষে হেমন্ত এলো।
প্রকৃতি সবুজ থেকে হলুদ হলো।
সোনালি রংয়ের ধানে ভরে গেলো মাঠ।
শুরু হলো নবান্ন উৎসব।
কৃষানীর আনন্দ ঘরে ঘরে।
পিঠা আর পায়াসের নিমন্ত্রণে।
ইচ্ছে করে এই ঋতুতে,
উৎসবে মাতি গান আর কবিতা পাঠে।
মেঘ, বৃষ্টির খেলা
ফরিদা বেগম।
মেঘের উপর মেঘ করেছে
চলছে মেঘের খেলা,
মেঘের খেলা দেখছি আমি সকাল সন্ধ্যাবেলা।
কোথা থেকে মেঘ আসে
আর কোথায় চলে যায়,
মেঘ রানী তোর খেলা দেখে সময় কেটে যায়।
দেখতে দেখতে হঠাৎ যেন,
ঝিরিঝিরিয়ে বৃষ্টি এলো লনে
আকাশ জুড়ে রোদের ছোঁয়া ঝিলিক দিলো বনে।
বনের আকাশ মনের আকাশ
সব আকাশেই আলো পড়লো এসে,
ভরলো ভূবন, ভূবন ডাঙ্গায়,
সুখ আনন্দের খুশীর জোয়ার বইছে অবশেষে।
বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর।
ফরিদা বেগম।
২৮/৭/২০২০।
বৈশাখ গেল, জৈষ্ঠ গেল, এলো আষাঢ় মাস।
বৃষ্টি তোর সৃষ্টি দেখে হচ্ছি হতবাক।
রিমঝিম ঝিম,বৃষ্টি পড়ে গাছের ডালে, বাড়ীর ছাদে।
আকাশ কাঁদে, বাতাস কাঁদে।
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা,
বাতাসে তার ভাসিয়ে ভেলা।
বৃষ্টি এলো মিষ্টি দুপুর, পায়ে দিয়ে সোনার নুপুর।
বৃষ্টি গানের সুরে সুরে,চলে যাই সেই অচিন পুরে।
মনে পড়ে সেই ছেলেবেলারি গান।
ছন্দে আর সুরে সুরে, মা ধরেছে তান।
মায়ের গানে, বৃষ্টির তানে,হারিয়ে যাই অনেক দূরে।
একটি সুরই বাজছে মনে।বসে আছি একলা লনে।
বীনার তানে, আসছে কানে, রবি ঠাকুরের গান।
বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদে এলো বান।
বৃক্ষ প্রেমিকের গল্প।
ফরিদা বেগম।
গাছের সংগে মিতালী আমার অনেক দিনের,
সেই ছোট্টবেলায় যখন দেখতাম,মালির সংগে বাবা, ঘুরে ঘুরে গাছ লাগাতেন।
কখনো সব্জী,কখনো ভুট্টা, আখ।আর বাড়ীর সামনে দুই ধারে,
শিউলি, বেলী,জবা কামেনী,আর নীল কন্ঠ ফুল।
টবে থাকতো ৯টা -১২টা, কিংবা সন্ধ্যামনি ফুল।
সেই ফুলের ঘ্রাণে কিংবা সবুজ বর্নের অপরুপ রুপ দেখে মনটা ভরে যেত।
তখন আনন্দে বগানের চারিপাশে,নেচে নেচে গান গাইতাম, ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে,,,।
বাড়ীর পিছনে ছিল কাঁচা মিঠা আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি,আমলকী,
পেয়ারা আর হরতকী গাছের সমারোহ।
চালতা,তেতুল,ডোওয়া,আর করমচা ছিল আমার অতি প্রিয়।
তারপর আস্তে আস্তে গাছ দেখে দেখে অনেক বড় হয়েছি।
গাছের সান্নিধ্যে,প্রজাপতি, মৌমাছি আর ভ্রমরের গুন গুন গান,আর গাছের মগডালে মৌমাছির বাসা
এক সন্ধ্যায় ধুপ জ্বালিয়ে সেই মৌমাছির জমানো মধু খাওয়া, আহা কত স্বাধ আর তৃপ্তি,
আনন্দ আর শান্তি। সেই থেকে আজো গাছ বড্ড ভালোবাসি।
একটু সুযোগ পেলেই বাড়ীর আশে পাশে কিংবা ছাদে গাছ লাগাই। এক বৃক্ষ প্রেমিকের মতো।
আজো সবুজ প্রকৃতি,গাছ ঘেরা আঙ্গিনা, ফুল-ফল
গাছ-গাছালি ভালোবাসি সেই ছোট্ট বেলার মতোই।
মা মনেয়ারা খাতুন।
ঝিনাইদহ এর নারীনেত্রী, সমাজ সেবক, শিক্ষাবিদ, ভাষা সৈনিক-এর প্রয়াণ দিবসে, তার অত্মার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার নিবেদন।
ফরিদা বেগম।
এই অবেলায় কবিতা লিখবো বলে বসে আছি,
কবিতা লিখতে বসে আমার মনে পড়ে গেল,
সেই সুদীর্ঘ বসরের সমৃতিময় দিনগুলির কথা।
এক মহিয়সী রমনী যে আমাকে সঙ্গে
করে নিয়ে এসেছিল এই অচেনা শহরে।
তখন কি বিষন্ন সময় কেটেছে আমার।
জানিনা কিসের জালে কিসের টানে এক
অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে গেছি এই শহরে।
অতঃপর, এক আলেকিত মায়ের সান্নিধ্যে ।
কেটেছে আমার বহুটা সময়।,
সেই মা, স্নেহ দিয়ে, বেধেঁছিল ভালোবাসার আঁচলে।
জীবনের সেই সোনালি সময়ে তার কাছে পেয়েছি,
সামনে পথ চলার প্রেরনার মন্ত্র, দিক নির্দেশনা।
ভেবে অবাক হই একজন অসাধারণ রমনী,
সেবা দিয়েছেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য,
নিজেকে বিলিয়েছেন সবার জন্য।
গরিব দুঃখী, ছোট বড় সবাইকে আপন করেছেন স্বমহিমায়।নিজের জীবনের গল্প বলেছেন ,
কি ভাবে সাধারন থেকে আসাধারন হওয়া যায়।
মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য তার সে কি প্রচেষ্টা।
বলেছেন, নারী সমাজ এগিয়ে যাও, তোমরাই পার,
তোমরাই পারবে।তোমাদের পায়ের মাটি শক্ত কর।
শিক্ষিত হও, সাবলম্বী হও, নিজেকে বিলায়ে দাও, পরের তরে।মানোয়ারা খাতুন ছিলেন,
এক জাতীয় নারী।
একদিন সাইদ স্যার বলেছিলেন, আপা ছিলেন,
এক ঋষি মানুষ, তার মধ্যে এমন কিছু ছিল,
যা কেবল অনুভাব করা যায়।
কথাটা আমার ভারী ভালো লাগেছিল।
সেই মহাপ্রাণ রমনী, ৭ই জুলাই ২০১৪
সালে চলে গেলেন, না ফেরার দেশে।
মনোয়ারা খাতুন, এক অসাধারন ব্যক্তিত্ব।
সাহিত্য, সাংস্কৃতি,জ্ঞান,বিজ্ঞান,রাজনীতি
কতো বিষয়ে দখল, সব নিঃশেষ করে চলে গেলেন।
সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন।
বিদায় বেলায় মা,তোমাকে রাখা হলো
তোমার নিজস্ব আঙ্গিনায়,সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে।ফুলে ফুলে ভরে গেল তোমার শরীর।
কাঁদলো মানুষ, কাঁদলো ঝিনেদা,অশ্রু ঝড়লো কত।
মা,তুমি ছিলে, তুমি আছো হ্রিদয়ে সবার।
আমরা তোমার অসহায় সন্তান
আগামী প্রজন্মের মাঝে তোমার বার্তা পৌঁছে দেব,
এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গিকার।
একুশের কবিতা
ফরিদা বেগম
০৭/০২/২০২১
একুশ মানে মায়ের ভাষা
স্মরণ করার দিন
একুশ মানে বরকতেরই
রক্ত ঝরানো ঋণ
একুশ এলে ছুটে যাই
সেই শহীদ মিনার চত্বরে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গান গাই
আর শ্রদ্ধা জানাই ফুল দিয়ে
একুশ নিয়ে গর্ব মোদের
বাংলা মায়ের সরোবরে
বাংলা ভাষা স্থান করেছে
সারা বিশ্বের দরবারে
একুশ মানে ভাষা দিবস
বাংলা ভাষা, রাষ্ট্রভাষা ,আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা
একুশ মোদের এগিয়ে যাওয়ার অনেক আশা
মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার নিবেদন
টুঙ্গি পাড়ার এক রাখাল বালকের গল্প।
ফরিদা বেগম।
এক রাখাল বালক জন্ম নিল,টুঙ্গি পাড়ার অজো গাঁয়ে,
ভয়, ভীতি দ্বিধাধন্ধ ছিলোনা তার কোন কাজে।
শিশুদের নিয়ে দল গঠন করে নেতা ছিলেন সবার মাঝে।
স্কুলে ছিলো ক্লাশ মনিটর, খেলার মাঠে টিম ম্যানেজার।
টুঙ্গি পাড়ার সেই যুবক আমাদের শেখ মুজিবর।।
দুঃখীজনের দুঃখ ঘোচাতে ছিলো তার একান্ত পণ,
মাথা নত না করে, জয় করেছে সবার মন।
বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য চৌদ্দ বসর তার জেলে কাটে,
রাজপথে ছিলেন তিনি ভাষা আন্দেলনের ডাকে।
তার কন্ঠ ছিলো অবিসংবিদ নেতার মতোন
বাঙ্গালী সোচ্চার হলো শুনে তার ৭ই মার্চের ভাষণ।
একাত্তরে দিয়েছিলেন তিনি স্বাধীনতার ডাক,
সাত কোটি বাঙ্গালী ঝাঁপিয়ে পড়লো শুরু হলো সংগ্রাম।
লাল,সবুজ পতাকা বেঁধে দিলেন বাংলা দেশের আকাশে।
বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক হয়ে স্থান করলেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের সংবিধানে রইলো তার অমর নাম,
আমরা পেলাম হাজার বসরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর স্বাধীনতার গান।
১১ Comments
মনের অজান্তে মনের কথা গুলি লিখে ফেলেছি আমার এই লেখা প্রকাশ করার জন্য কবি ও কালা মিষ্ট জনাব আবুল খায়ের কে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা
কালের প্রতিবিন্ব পত্রিকায় আমার গুচ্ছ কবিতা প্রকাশ হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত ।পত্রিকাটি উত্তোত্তর আরো সমৃদ্ব হোক ।আমি পত্রকাটি সফলতা কামনা করি ।
আমার এই গুচ্ছ কবিতা যদি পাঠককুল কে একটুও আনন্দ দিতে পারে, তবেই আমি সফল ।আশা করি তাদের ভালোবাসায় অনুপ্রেরিত হয়ে আমি আরো এগিয়ে যেতে পারবো।প্রত্যাশা করি এই অঙ্গন আরো সমৃদ্ব হোক ।
Best wishes.Thanks to all.
কবিতার মধ্য দিয়ে আমি আমার ভালোবাসার কথা ভালোলাগার কথা বলতে চাই
এইতো বেশ আছি প্রকৃতির কাছাকাছি
এখন আগস্ট মাস, সুখের সুখের মাস/ বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই/ আমার গুচ্ছ কবিতা র মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আমার নিবেদন, টুঙ্গিপাড়ার এক রাখাল বালকের গল্প সবাই কে কে পড়ার আমন্ত্রণ জানাই/
এখন আগস্ট মাস শোকের মাস /আমার আগের পাঠানো বার্তায় ভুলবশত শোকের পরিবর্তে সুখের হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী/
হঠাৎ করে পেয়ে গেলাম আমার গুচ্ছকবিতা ঢালী/ কবিতাকে ভালোবেসে লিখতে চাই আরো কবিতা, আসুন আমরা কবিতা পড়ি/ কবিতার মত জীবন গড়ি/
একটু ফিরে দেখি। কবিতাগুচ্ছ ঢালী। ভালোলাগার প্রকাশ। সবাইকে ফাল্গুন মাসের শুভেচ্ছা।
আমাদের যৌথ কাব্যগ্রন্থ,” খন্ডিত চন্দ্রালোক”এখন পাঠকের হাতে। সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ রইল।