নিমপাতা
পৃথিবীর খেলাঘরে আমি তো নিমপাতা।
দূর্ভাগ্যের ঘোর ঘনঘটায় জন্ম আমার।
যত ঔষধি গুণ আমার আছে না কেন,
কোন কৃতিত্ব ভাগ্যে জুটে না আমার।
যত রসের টুইটুইম্বরে ডুব দিয়ে উঠি না কেন,
তেতোই মনে হবে আমার কার্যকারিতার ফল।
কারো হৃদয়ে নেই আমার কার্যকরী দখল।
আমাকে দেখলেই ভ্রু কুচলি ফুলিয়ে,
মুখ ভেংচিয়ে,নাক-মুখ খেচিয়ে
সমমনা সবাই বলবে,
“নিমপাতা নিছক উপকারী কিন্তু খুব তেতো।”
সেতো আমার জন্ম-জন্মান্তরের দূর্ভাগ্যের সেতু।
পৃথিবীর খেলাঘরে তো সমমনাদের রাজত্ব।
আমি শুধু জন্ম অভিশাপে বরণ করি দাসত্ব।
তারিখ ০৫-০৯-২০২০ইং।
সেকাল একাল
সেকালে লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে নিয়ে
কৃষক কাক ভোরে যেতো মাঠে,
জোড়া গরু লাঙ্গল কাঁধে চষতো জমি
হেইত্ হেইত্ সুরালয়ের মন্ত্র পাঠে।
জমি চষা হইলে শেষ পানতা মেশানো জলে
গপাগপ খাইতো কৃষক লবন,মরিচ ঢলে।
শিল্পী পাখি বাবুই পাখি সুনিপুণ কারিগর
তাল গাছেতে ঝুলতো সদা যুগল আরশিনগর।
সারি বেঁধে টাকি,শোল ঘুরতো কত
পোনা নিয়ে স্ফটিক জলে ভেসে।
মা চাচীরা মনের সুখে সারি বেঁধে
মারতো উঁকুন দুয়ারেতে বসে।
শুক্রবারে টিভির সামনে মেলতো লোকের মেলা
বৃহস্পতিবার হাফ স্কুল সবার মনে রঙ বেরঙের খেলা।
তিব্বত স্নো মুখে নিয়ে বৌঝির খুশির বান,
কসকো সাবান গোসলে ছিল কতই না তার ঘ্রাণ।
কলা পাতার ছাউনি দিয়ে খেলতাম পুতুল মেলা,
আরো হতো সঙ্গী সাথীর জামাই বউয়ের খেলা।
নিজের পুতুল অন্য সখির পুতুলের সাথে বিয়ে,
ঘর সংসারি সেই হয়েছি কৈশোর যৌবন নিয়ে।
পালকি চড়ে নব বধূ ঘর ছেড়েছে বাপের,
গরুর গাড়ীর ছৈয়ের নিচে ঘুমটা ছিল তাদের।
পালকি বাহক চার বেহারা গান ধরেছে হুহু উহুহু
মনের ভেতর সুখের নাচন বুকের ভেতর ধুকধুক।
কলা গাছের ঘর বানিয়ে ব্যাঙের বিয়ে কত,
অনাবৃষ্টি হলেই মজার খেলা ব্যাঙের বিয়ের মত।
খেলাধুলার খেলনা ছিলো যত রকম যত
বললে হবে একালেতে হাসির খোরাক শত।
গরুর গাড়িই বাহন ছিল দুর দুরান্তের যাত্রা
হারিকেন আর কুপির আলোয় পড়ালেখার মাত্রা।
সেকালের সে দিনগুলো আজ কেবলমাত্র স্মৃতি,
রেডিওর গান হয়না শোনা গানের সাথেই বসতি।
হাতের কাছেই গান এখন কত কত রীতিনীতি,
ভুলে গেছি গান পাগল আজ সুর মূর্ছনার প্রীতি।
মোবাইলটা দিয়ে শিখছি কত
আপডেট রাখার মনন।
যে বুঝে না তার কাছে এটা
শয়তানের বাক্সের মতন।
প্রকৃতির সেই শীতল হাওয়ায়
এসি রুম মনে হতো গ্রাম,
বৈশাখের সেই ঝড়ের মাঝে
নেমে যেতাম কুড়াতে পাকা আম।
সেকালে গিয়েছি পায়ে হেঁটে
শিক্ষা নিতে স্কুল কলেজে,
কেউ বুঝে না সফলতার মূলে
কত নিদারুণ কষ্ট ছিলো যে।
সেকালেও মানুষ ছিল সরল গরল
মূল্যবোধ ছিলো প্রবল,
সুযোগ পেলে তখনও সবলেরা
দুর্বলকে মারতো বিষাক্ত ছোবল।
ছেলে মেয়ের প্রেম কাহিনী ওরে বাবা!
প্রেমে ছিলো যমের মতো ভয়,
পিতামাতা, পাড়াপড়শির চোখ রাঙানি
নো, কোন প্রেম কাহিনি নয়।
পিতামাতা,শিক্ষকদের বাধ্য ছিলাম
ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ফুটিয়েছি ফুল,
পড়ালেখায় দেইনি ফাঁকি আনন্দ উল্লাসে
শৈশব কৈশোর কেটেছে মুক্ত বিহঙ্গে অভিলাষে।
একালে মানুষ আর মানুষ নেই
মমতার বাঁধন গেছে ছিড়ে,
সহানুভূতি, আতিথেয়তা হারিয়ে গেছে
স্বার্থলোভী অমানুষের ভিড়ে।
আমরা কত সাতার কেটেছি
স্বচ্ছ পুকুর জলে,
প্রজন্ম আর পায় না পুকুর
সাতার শিখবে বলে।
ডোবা নালা, পুকুর জলাশয়
ফ্লাট মালিকের দখলে,
শহর-বন্দর-গঞ্জ নয় যে শুধু
স্বচ্ছ জলের পুকুর ভরাট সর্ব মফস্বলে।
একাল থেকে সেকালই ছিল ভাল
নস্টালজিক বলয়,
সোনালি ভোর ফিরে আসুক
ডিজিটাল আলোয়।
তারিখ-১৭/০৯/২০২২
২ Comments
Thanks.Best whishes Protibimbo Prokashon
Old is Gold.
Beautiful poetry.best wishes U.Congratulations.
Let’s go.