১) কাল্পনিক প্রতিশ্রুতি
কথা দিয়েছিলাম তোমায়,
হে প্রকৃতি মাতা-জননী
আবার ফিরে আসব তোমার-ই মাঝে,
রক্তিম বর্ণ অবেলার সেই গোধূলি সাঁঝে।
অপরূপ সৌন্দর্য আর সবুজের মায়ায়,
উদার আকাশের নীলচে ছায়ায়,
বলেছিলাম আমি ব্যাকুল হয়ে তোমায়,
দূরে যেতে চাইনা কভু তোমায় ছেড়ে।
তোমার কোমল মমতা দিয়ে
চিরকাল বেঁধে রেখো আমায়।
তোমায় আমি কথা দিয়েছিলাম
সবুজ ধানক্ষেতের আলতো ঢেউয়ে মিশে যাব,
বাতাসে দুলতে থাকা ওই কলমি ফুলের সাথে
আমি আবারো নৃত্যে মত্ত হব।
ফিরে আমি আসব আবারও
ক্লান্ত বিলের সেই রূপালী জলে,
নির্বিঘ্নে ভাসতে থাকা
বুনোহাঁসের ওই শ্রান্ত দলে।
তাইতো আবার এসেছি ফিরে
তোমার-ই আশ্রিত কোলে,
করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অরণ্যে
একবার হারিয়ে যাব বলে।
আমি তো এখনো ভুলতে পারিনি
তোমার দেয়া সেই স্নিগ্ধ মায়ার নীতি,
তাইতো শেষবারের মতই রাখতে এসেছি-
তোমায় দেওয়া সেই
কাল্পনিক প্রতিশ্রুতি।
২) নিঃশর্ত মুক্তির অপেক্ষায়
আমিও আবার শীতের প্রভাতে
ঝাপসা কুয়াশা আর শিশির ফোঁটা দেখতে চাই।
নির্মম এই ব্যস্ত শহরের যাঁতাকল থেকে
যদি বা প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার একটা সুযোগ পাই।
আমিও আবার ভোরের পাখি হয়ে
সূযির্যমামার হাত ধরে প্রথম দিনের আলো দেখতে চাই।
ঘরকোণা এই বদ্ধ শহুরে জীবন থেকে
একেবারে-ই না হয় গভীর অরণ্যে হারিয়ে যাই।
কাশফুলে ঘেরা ওই বংশীর পাশে
আমি আবার ফুরে যেতে চাই।
ছন্দহীন ঢেউয়ের সাথে কচুরিপানার খেলা দেখে
শেষবারের মতই না হয় চোখটা জুড়াই।
ইটপাথরের এই বদ্ধ দালান ছেড়ে
আমি আবার একটাবার বৃষ্টিতে ভিজতে চাই।
অচীরে হারিয়ে যাওয়া সবুজের মাঝে
নৃত্যধারী বর্ষার সাথে না হয় শেষবারের মতোই হাতটা মিলাই!
যেতে চাই আমি আবার সেই হেমন্তের দেশে
যান্ত্রিক শহুরে নির্জীব থেকে না হয় নবান্নের ই বেশে।
কখনো বা ক্ষেতে দুলতে থাকা ধানের সোনালী রংটাই হলাম
তবুও তো একবার গরিব কৃষকের মুখে হাসি ফোঁটালাম।
জীবনের পেছনে দৌড়তে দৌড়তে
হয়তো বা ভুলেই গেছি সেই চিরপ্রিয় বসন্ত।
ব্যর্থ মানবজীবন আবিষ্কার করতে গিয়ে
চিরকাল-ই রয়ে গেলাম আমি ঘুমন্ত।
এমন শহুরে জীবন যেন আমি কখনোই না পাই,
স্মৃতিকাতর আমি তো আমার প্রকৃতির কোলেই হারাতে চাই।
এর পরের জনমেও জন্মালে যেন
আমি ঘাসফুল হয়েই জন্মাই।
৩) ছন্নছাড়া ভাবনা
কখনো কখনো হারিয়ে যেতে চায় এই মন
কোনো এক দূর অজানাতে
যেখানে দিগন্ত মিশে যায়
সাগরের নীল সীমানাতে।
কখনো কখনো ইচ্ছে হয়
উড়ে যেতে ঐ আকাশটাতে
পাখির মত দুটি ডানা মেলে
যাই হারিয়ে সেই নীল সীমানাতে।
কখনো কখনো ভাবি বসে
শুধু একা আনমনে
নিরব নিস্তব্ধ কোন পথের প্রান্তরে
হেঁটে চলেছি অনন্তকাল ধরে।
কখনো কখনো কল্পনাতে
হেঁটে যাই সেই সাগর পাড়ে
যেখানে নীল জলরাশি খেলা করে
দিগন্তের সাথে জোট বেঁধে।
ছন্নছাড়া এসব ভাবনাগুলো নিয়ে
ভেসে যেতে চায় এ মন সেই সাগরে
যেখানে ভাসিয়ে দেবো সকল গ্লানি
রইবেনা আর ব্যর্থতার হাতছানি।।
৪) অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়
ঘড়ির কাঁটাটাকে জোর করে পেছনে সরিয়ে দেই
তাহলে ফিরে যেতে পারতাম
স্বর্ণালী সেই অতীতের সময়গুলোতে
নিরব, নিস্তব্ধ এই বর্তমান আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বেদনায়
তাহলে আর কুঁকড়ে থেকে হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হতো না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়
জীবনটাকে ঝলমলে আলো দিয়ে আলোকিত করে রাখি
দুঃখ, কষ্ট, বেদনা নামক শব্দগুলোকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে দিয়ে
জীবনটাকে করে তুলি ফ্লাডলাইটের আলোর মত আলোকময়।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ছুটে যাই সাগরের সেই পাড়ে
যেখানে জীবনের জমে থাকা কষ্টগুলোকে
সাগরের জলের সাথে মিশিয়ে দিয়ে
জীবনকে শুরু করা যায় নতুন করে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় হাত বাড়িয়ে ধরি পূর্ণিমার ঐ চাঁদ
যেখানে লুকিয়ে থাকে অব্যক্ত সব অনুভূতি
জাগতিক সকল না পাওয়ার ব্যাথা ভুলে
ভেসে যেতে ইচ্ছে করে পূর্ণিমার ঐ স্রোতে।।
লেখক: আমেরিকা প্রবাসী কবি
৩ Comments
অসাধারণ।
অসাধারণ!
nice poetry, very good job; congratulations