জোসনা দেখি না
আমার জীবন আমার কাছে
নদীর মত নয়
দুঃখে সুখে জীবন চলে
নেই কো কোন ভয়।
আমবাগানে জোসনা রাতে
এনিয়ে বিনিয়ে তোমার সাথে
কত না কথাই হলো
তিন সত্যি ভালোবাসি শতাধিক বার বলো।
কোথায় তুমি কেমন আছো
খবর জানি না
চাঁদ জেগে রয় একা একা
জোসনা দেখি না।
তুমি আর আমি
এম এ শোয়েব দুলাল
হারাগাছ, রংপুর
ভোরের দৃশ্যে তুমি আর আমি
স্বপ্ন দেখায় রাত জাগা পাখি
আকাশ হাসে আলোর ভেলায়
ফিরছি নতুন দিনে।
যুগলবন্দী ভালোবাসা সব
আসবে কদিন পরে
খেলবে শিশু উঠোন বুকে
আমাদের হৃদয় জুড়ে।
ভালোবাসায় ভালোবাসা নেই
তোমাকে ভুলতে চাই কিন্তু পারি না
তোমাকে ভুলে বহুদুরে যেতে চাই
থাকতে চাই আড়ালে
কিন্তু কেন জানি পারি না।
একটু আড়াল হলে স্মৃতির উঠোনে
ভালোবাসা ডানা মেলে নীলকাশে
বিশুদ্ধ বাতাসে ভেসে উঠে তোমার মুখচ্ছবি
দুর থেকে বলে উঠো ভালোবাসি ভালোবাসি।
হাত ধরে হেটে চলা অযাচিত কথা বলা
সুখে দুঃখে সাথী হওয়া
এসব কি ভুলে থাকা যায়?
কি করে বলি তুমি আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছো।
তবুও তোমাকে ভুলতে হবে
একা একা চলতে হবে
কখনো কখনো জ্বলতে হবে
কেননা এখন ভালোবাসায় ভালোবাসা নেই।
তুমি আসবে বলে
তুমি আসবে বলে
তিস্তার চরে ঘর বেঁধেছি
দখিনা দুয়ার খুলে রেখেছি।
তুমি আসবে বলে
কুমড়ো শাক, লাউ পাতা
লাল আলুর ফসল বুনেছি।
তুমি আসবে বলে
আমার পোষা পাখিটি
ছেড়ে দিয়েছি।
তুমি আসবে বলে
আমাদের বড় মাঠটায়
কবিতা পাঠের আসর ডেকেছি।
তুমি আসবে বলে
হক বাজারে
কত্তো বাজার করেছি।
তুমি আসবে বলে
আমি সেজেগুজে
বসে আছি।
তুমি আসবে বলে
শুকনো কলাপাতায় লেখা হবে
তোমার জন্য একটি প্রেমের কবিতা।
আমাকে বোঝ না
তুমি গ্রাম, শহর হই হুল্লোড়
সন্ধ্যায় হাট-বাজারের উৎসব বোঝ।
যুদ্ধ বোঝ
শহর সমাজের কষ্ট বোঝ।
সুখ স্বপ্ন বোঝ
আমার কষ্ট উৎসব বোঝ না?
হৃদয়ে ক্যাক্টাস বোধ
কিছুই রেখে যাইনি
পুরাতন কাগজ, কালিবিহীন কলম
দেয়ালে লটকানো কিছু ছবি এবং
কথা মালা ছাড়া।
ভালবাসা কিছুই রেখে যাইনি
গুটি কয়েক পত্র ছাড়া।
অনুভবে চিবুক ছোঁয়া
মুখোমুখী বসে কথা বলা শুধু শুধু।
গেল বন্যায় ঝাউপাতার গাছ ভেসে গেছে
ভেসে গেছে-
চেরিফুল, গোলাপ, বেলী, চাঁপা, হাসনাহেনা
জুঁই এর চিহ্ন মিশে গেছে
পলিমাটির মানচিত্রে।
আমি রোদে পুড়ে, পুড়ে
পুরোনো পাপী বনে গেছি।
সামনে অশ্রæসিক্ত দু’টি চোখ ভাসে
আমি সেই চোখে চোখ রাখি
সম্বিত ফিরে পাই
ফিরছি মরীচিকার প্রতিচ্ছবিহীন
বলয় থেকে।
কিছুই রেখে যাইনি কিছু স্মৃতি ছাড়া
স্মৃতিগুলো আঁধারে আঁধারে
মরচে রূপায়িত
জোছনায় অন্য কোথা
প্রতিচ্ছবিহীন সারাবেলা
হৃদয়ে ক্যাক্টাস বোধ।
আমার গ্রহণের নবান্ন যাত্রায়
আর বাঁশি বাজে না
নবান্ন উৎসবে ক্ষুদ্রাতিকৃতি
আমিত্ব ভালবাসা সবুজে সবুজে
খন্ডিত দু’তীর বেয়ে এখন আঁকা বাঁকা পথ।
বিশ্বাসী বজরায় ভেসে আসে যদি
তোমার সকরুন সুর
মুক্তির জয়গান
নষ্টালজিয় মাঘী-পূর্ণিমায় দোল খায়
সজনে পাতা, কুমড়ো শাক, সুপারী বাগান
তোমার হলুদে ওড়না
মাথা ভর্তি এলোচুল।
যদি বাজে বাঁশি মন যমুনায়
গেয়ে উঠে রাখালী গান
আমার এই মেঠো পথের অদৃশ্য বেদনায়
তবে তুমিও থেকো আমার গ্রহনের নবান্ন যাত্রায়।
চৌদ্দ বছর পরে কী দিয়ে বরণ করি
চৌদ্দ বছর পরে চারা বটতলায়
হয়তো বা বিনির্মান হয়েছে বহু ইমারত
সবুজ খেত দখল হয়েছে আকাশ ছোঁয়া দালানে
নিশ্চয়ই বট গাছটি কেঁটে দেয়া হয়েছে
দুষ্টু শিশুর দল, অচেনা পথিক, উদাসী কবি
গাছটির ছাঁয়ায় আর বসে থাকে না।
চাঁদ আর সূর্যের আলোয় একা একা দোল খায়
চারা বটতলা, ভোরের আকাশে ভেসে বেড়ায় পাখির দল
কী দিয়ে বরণ করি তোমাকে বলো।
স্মৃতি বিজড়িত তোমাদের গ্রাম
সেই স্কুলপাড়া এখন স্মৃতির উঠোন।
দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে তোমার বোনের বাড়ী
মেঠোপথে হেঁটে চলা
দু’পাশে সবুজের খেত ধানের শীষে শিশির বিন্দু
দুরে দুরে কৃষকদের বাড়ী, সুপারী বাগান গাছ গাছালী
সব কিছুই মনে পড়ে চৌদ্দ বছর আগের তোমাদের গ্রাম
তুমি ভীষণ অতিথি পরায়ণ
কী দিয়ে বরণ করি তোমাকে বলো।
লেখক পরিচিতি:
জন্ম:
কবি এম এ শোয়েব দুলাল, পিতাঃ মৃত: আব্দুল বারী, মাতাঃ মৃত: রমিছা বেগম, তিনি ০১/০১/১৯৬৭ইং সনে হারাগাছ পৌরসভাধীন সারাই দোয়ানীটারীতে জন্মগ্রহন করেন।
সাহিত্য চর্চা:
সাহিত্যের সব শাখাতেই অবাধ বিচরণ তাঁর। লিখছেন দীর্ঘদিন থেকে দেশ ও দেশের বাহিরে। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বেশ কিছু সম্মাননা। সম্পাদনা করছেন কালি কলম, অক্ষর, শব্দসহ বেশ কিছু লিটলম্যাগ। যা সাহিত্যাঙ্গনের ব্যাপক সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: বেদনার অশ্রু (কবিতা- ১৯৮৭), মহাপ্লাবন (কবিতা-১৯৮৮) শিরোনাম নেই তবুও আমরা (যৌথ কবিতা-১৯৯০), তুমি যদি কথা দাও (কবিতা-১৯৯২), হৃদয়ে ক্যাক্টাস বোধ (যৌথ কবিতা-১৯৯৪), ফেরাও আমাকে (প্রবন্ধ-১৯৯৭), কি যে ভালোবাসি (কবিতা-১৯৯৪), হারাগাছ ধুমনদী ধুমগড় (প্রবন্ধ-২০১৪) এই সব মানুষের গল্প (যৌথ গল্প-২০১৬), স্মৃতির উঠনে তোফাজ্জল হোসেন (প্রবন্ধ-২০১৬), দ্বিধাহীন একদিন (যৌথ কবিতা- ২০১৬), তুমি আসবে বলে (কবিতা-২০২১) উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
আমরা এই গুণী লেখকের দীর্ঘ জীবন ও মঙ্গল কামনা করি…