আশি-নব্বইয়ের দশকে ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটকে ঘিরে লিটিলম্যাগের যে স্রোত বইয়েছিল- তার অন্যতম সারথি ছিলেন তারেক মাহমুদ।
কবি, অভিনেতা ও নির্মাতা তারেক মাহমুদ মারা গেছেন। আশি-নব্বইয়ের দশকে ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটকে ঘিরে লিটিলম্যাগের যে স্রোত বইয়েছিল- তার অন্যতম সারথি ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার মগবাজারের কমিউনিটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। টেলিভিশন নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান সাগর সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া অনেক লেখক, কবি শিল্পী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
তারেক মাহমুদের মৃত্যুতে অভিনেতা কচি খন্দকার ফেসবুকে লিখেছেন, “প্রিয় তারেক মাহমুদ গতকাল আমাকে তার শেষ ছবিটা পাঠায়। অদ্ভুত জীবন তারেক, তোর চলে যাওয়া মানছি না। এটা মিথ্যা হোক।”
কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ ফেসবুকে লিখেছেন, “কবি তারেক মাহমুদ মারা গেছেন হার্ট অ্যাটাকে, খানিকক্ষণ আগে। আমরা যখন শাহবাগের আজিজ মার্কেটের বাসিন্দা হচ্ছি সেই ১৯৯৯, ২০০০ কালপর্বে, তখন আজিজ ছিল তার বাড়িঘর। ‘পথিক’ নামে একটা ছোটকাগজ করতেন মনে পড়ে। কবিতা লিখতেন। দেখা হলে দূর থেকে হাসি বিনিময় হতো আমাদের এককালে। কখনোবা কথাও। এখন তো আজিজের সেই আড্ডাও নাই, হাসিও নাই, আছে ভারচুয়াল হাসির ইমোজি। তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল শিল্পকলা একাডেমীতে, মাস দুয়েক আগে। আর এখন শুনলাম, তিনি নেই। যেখানেই থাকেন, ভালো থাকবেন তারেক ভাই।”
তারেক মাহমুদকে নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস লিখেছেন অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি লিখেছেন, “আমার নাটকে আমার একটি প্রিয় চরিত্র করেছিলেন তিনি। নাটকের নাম ‘গফুরের বিয়ে’। চরিত্রের নাম ছিল আলতা পাগলা। বাস্তবে আলতা চরিত্রটি আমার কাকা। সবাই তাকে আলতা পাগলা বলে ডাকে। চরিত্রটি যখন তাঁকে বুঝিয়ে বললাম, এমনভাবে তিনি করেছিলেন যে তার ভেতরে আমি আমার কাকাকে দেখেছিলাম। তারেক ভাই শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু এই দেশ ও জাতি তাঁকে চিনতে পেরেছিল কিনা, জানি না।”
কবি ও সম্পাদক আহমেদ শিপলু ফেসবুকে লিখেছেন, “তারেক মাহমুদ ‘পথিক’ নামে একটা লিটলম্যাগ সম্পাদনা করতেন। প্রথম তাকে চিনি ‘ফিরে যাচ্ছি হৃদের কাছে’ শিরোনামে কবিতার বইয়ের মাধ্যমে। প্রথম আলাপ হয় সম্ভবত ১৯৯৯ এর দিকে। টিএসসির সড়কদ্বীপে, স্বোপার্জিত স্বাধীনতার বেদিতে বসে হ্যাট মাথায় গান গাচ্ছিলেন আড্ডার ছলে, অদ্ভুৎ লিরিক! ‘একটা কাতলা মাছে খাচ্ছে তামাক, আম গাছেতে ঠ্যাং তুলে…’ তারপর আলাপ পরিচয় হল, জিজ্ঞেস করলাম এই গান কার? কই পাবো? বললো শিল্পী অভিনেতা বাদল শহীদের ‘কইয়োরে নদী’ এ্যালবামের। তারপর আজিজ মার্কেটে গিয়ে সুরের মেলা থেকে সেই ক্যাসেট সংগ্রহ করি। শেষ গত বইমেলাতেও তারেক ভাইকে বললাম ওই গানটা একটু ধরেন, কোনো ভণিতা না করে গাইতে শুরু করেছিলেন বরাবরের মতোই। জীবনকে সিরিয়াসলি না নিয়ে, প্রফেশনালি না নিয়ে উড়িয়ে পুড়িয়ে গুড়িয়ে ঘুরিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিয়ে আজ মাঝরাতে বললেন ‘যাচ্ছালা! যাহ!’ লিটলম্যাগ চত্বরে দাঁড়িয়ে আর দেখবো না আপনাকে।”