দোয়েলের ঠোঁটে কাব্যকলা।
রতন মাহমুদ
কবিতা কবিতা বলে চেঁচিয়ো না ঊর্ধ্ব স্বরে ওগো
তোমার সোনা রঙের অনামিকা থেকে স্মৃতিচিহ্ন
রক্তের ফোঁটায় যদি ঢেকে যায় রূপবতী রশ্মি
দুগ্ধফেননিভ আলো সন্তর্পণে বিচ্ছুরিত হয়
কালপেঁচা আঙুলের রঙ্গলীলা জ্বলন্ত আগুন
জেনে গেছি সবকিছু, তুমি তাই কবিতা পাবে না।
কবিতা কবিতা বলে চেঁচিয়ো না ঊর্ধ্ব স্বরে তুমি
শতাব্দীকালীন রূপ রক্তবিন্দু কবিতা বিরোধী
কবিতা দেবো কীভাবে? তোমার কাঁধের আঁচিলের
স্পর্শ-গন্ধ ঢেকে রাখো, পা-যুগল গঙ্গাজলে ধোয়া
সহস্র বাঁধের নাশী দেহ-নদী মৃত্যুর কবলে
খুলে দাও স্রোতধারা, ভাষারূপ কবিত্বে জাগুক।
শিশিরের কুসুমের আলোক উত্তাপ তুচ্ছ করে
কবিতা কবিতা করে ঈগলের নখে স্বপ্ন খোঁজো!
গ্রীবার ঝাঁকুনি মৃত, শিহরণে ধু-ধু বালুচর
কাঠগোলাপের ডালে ধনেশের ঠোঁটে সিলগালা
স্বর্গ ও মর্ত্যের বাড়ি একাকার নীরব নিশ্চুপ
মানুষের মুখ বন্ধ, বোজা চোখে অবরুদ্ধ অশ্রু।
প্রিয়তম বঙ্গভূমি পূর্ণ দৃষ্টি বাক-বুলি দাও
কুমারী দোয়েল তার ছোট ঠোঁটে হরীতকী ভেঙে
নির্ভয়ে নাচুক দেখি। শ্যামলীর ভয় দূর হোক
তারপর কবিতার মহিমায় দাবি মেনে নেবো।
ফুলের গন্ধে ও বর্ণে নর-নারী চিত্রিত চিন্ময়
চিবুকের তিল দেখে কাঁপিয়ে দিয়েছি বাদ্যধ্বনি।
এসব পাখি পোকার মুক্তির সনদ, কবিরও
নবরূপে আবির্ভূত সুর-শক্তি বেদনা সঙ্গীত
প্রকৃতি আশ্চর্য শূন্য, বনভূমি অসীম আচ্ছন্ন
ঝুলন্ত পাতার শিল্প, বাবুই পাখির ছনমন
রহিত না হলে, কবিতা কবিতা করে ঊর্ধ্ব স্বরে
যেভাবেই ডাকো তুমি বিভ্রান্তির বর্গি তাড়াবোই।
কবিতা কবিতা বলে চেঁচিয়ো না বিরক্তির সুরে
আমার শায়িত মৃত দেহখানি পাবে না কবর
পাঠাবে না চম্পট চিতায়, শবদাহে অগ্নিকুণ্ড
না দিলেও স্পষ্ট জেনে রাখো ; কবিতা পাবে না তুমি।
ধানমণ্ডি, ঢাকা
বাংলাদেশ
২৯ নভেম্বর, ২০২১
২ Comments
অসাধারণ একটা কবিতা
congratulations.