ডাস্টবিনের ভাঙা দেয়াল
-আবুল খায়ের
(ডাস্টবিনে ফেলে রাখা শিশুকে উৎসর্গ করে)
কার ঔরসে পয়দা শিশুর মুচকি হাসি শ্যাওলাতে
কোথায় থেকে ভেসে এসে ওঠলো যে কার তল্লাটে
বেগ-আবেগের প্রণয়লীলা উদয়-অস্ত কার ইশারাতে
ওঠলো যে সুর বেসুরে আজ বাজল যে কার বেহালাতে
জাত বেজাতের দ্বন্দ ভুলে মিষ্টি মধুর ছন্দ তুলে
গা ভাসিয়ে দিলে তুমি বৃষ্টিভেজা কালরাতে।
আবেগের সাথে বিবেকের কভু হয় না কোন সন্ধি
মানবতার শিকল পায়ে ইজ্জত ক্যান আজ বন্দি।
সন্তান আজ কার কোলে হায়, কার নয়নে নয়ন
বিচারপ্রার্থীর যাপিত জীবন হুমকিতে ক্যান চয়ন।
ডাস্টবিনের ওই খুপড়ি ঘরে খিলখিলিয়ে কে হাসে
হাসি মুখে ফাঁসিতে ঝুলাও একটুখানি ভালোবেসে।
বাবা-মায়ের আদর নেই, জীবনটাও হুমকিতে
দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ করে পারবে না আর দম নিতে
বিশ্ববিবেক দাফন করে হীরা পান্না চুন্নিতে।
আকাশ বাতাস ভারী ক্যান মরণ বীণ কে বাজায়
কার পাপের তাপে-অভিশাপে কে শাস্তি পায়।
কর্মযজ্ঞে ধর্ম ফেলে মর্ম মূলে অন্ধজনে আলো পায়
অর্থ-অনর্থ ব্যয় ভুলে হিসেবের খাতা রাখ তুলে
অন্যের বাসর সাজিয়ে যায়, তাতেই সে মজা পায়।
কেউ যায় শখে বসে কেউ আবার উল্লাসে
কেউ খেয়ে মজা পায়, কারো জিবে জল আসে
কারো জীবন যায় যায়, কেহ দেখে হেসে বেড়ায়
কেউ মজে উচ্ছ্বাসে, কেউ চোখের জলে ভাসে।
মানবতার সেবার নামে ওঠে তুফান দিন শেষে
ঘুণে ধরা সমাজ যে আজ পঁচন ধরা নির্যাসে।
কান্নায় দেখ পান্না ঝরে খোদার আরস কাঁপল যে
বাপ-দাদার ভিটে-মাটি কোথায় ফেলে আসল যে।
দোহায় লাগে জীবনটাকে মোড়কে দাও বেঁধে
কার এতো হিম্মত যে আজ আমার জন্য কাঁদে–
জীবন আমার হুমকিতে আজ ভালোবাসার ফাঁদে।
বাবা-মায়ের আদর-কদর কে দিবে চুম কপালে
ধিক্কার জানাই ভিক্ষার ঝুলি, ভালোবাসা রুমালে
শান্তি চাই ভ্রান্তি ভুলে ডাস্টবিনের ওই দেওয়ালে
কারো জীবন যাচ্ছে চলে কারো আবার হেয়ালে।
লেখক: কবি ও কলামিস্ট
৫ Comments
মর্মান্তিক কথামালা
thanks dear poet.
Extremely nice writeup
মানুষ নিজেকে যতই সভ্য দাবী করছে ততই মানুষ অসভ্যতার সাক্ষর রেখে যাচ্ছে ! প্রিয় কবি আবুল খায়ের ভাইয়ের বাস্তব সমাজের ” ডাস্টবিনের ভাঙা দেয়াল ” কবিতাটি না পড়লে একটি শিশুর আর্ত চিৎকারে এতো তীব্র তিক্ততা তা কখনও
অনুধাবন করতে পারতাম না।
সত্যি আমি নিজেকে একজন মানুষ ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
thanks dear poet.