সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখক অ্যানি আর্নাক্স:
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখক অ্যানি আর্নাক্স। ‘যে সাহস ও তীক্ষ্ণতার মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড়, বিচ্ছিন্নতা ও সম্মিলিত সংযম উন্মোচন করেছেন’ তার জন্য সাহিত্য জগতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় স্টকহোমে এ বছর সাহিত্যে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
অ্যানি আর্নাক্স ৩০টিরও বেশি সাহিত্যকর্ম লিখেছেন। নিজের লেখায় ধারাবাহিকভাবে এবং বিভিন্ন কোণ থেকে জীবনে লিঙ্গ, ভাষা ও শ্রেণি সম্পর্কিত বৈষম্যের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তিনি।
অ্যানি আর্নাক্সের জন্ম হয়েছে ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তার সাহিত্য মূলত আত্মজীবনীমূলক ও সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭তম নারী হিসেবে এই পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
আর্নাক্স বলেছেন, লেখালেখি একটি রাজনৈতিক কাজ, যা সামাজিক বৈষম্যের প্রতি আমাদের চোখ খুলে দেয়। এই উদ্দেশ্যে তিনি ‘ছুরি’ হিসেবে নিজের ভাষা ব্যবহার করেন, যা তার কল্পনার আবরণ ছিঁড়ে ফেলতে সাহায্য করে।
এর আগে, ২০২১ সাহিত্যে নোবেল জিতেছিলেন তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আব্দুলরাজাক গুর্নাহ। প্যারাডাইস নামে তার চতুর্থ উপন্যাসের জন্য এ সম্মাননা পান তিনি। তার আগের বছর পেয়েছিলেন মার্কিন কবি লুইস গ্লুক।
গত সোমবার (৩ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২০২২ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথমদিন ঘোষণা করা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেলজয়ীর নাম। এ বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সুভান্তে প্যাবো। আদিম মানুষের জিনোম উদঘাটন ও মানব বিবর্তনের জিনোম সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীর নাম। এ বছর এ পুরস্কার জিতেছেন ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যালেইন অ্যাস্পেক্ট, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী জন এফ. ক্লজার এবং অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী অ্যান্টন জেলিঙ্গার। ‘বিজড়িত ফোটন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেল অসমতার লঙ্ঘন প্রতিষ্ঠা এবং কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য’ তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
এরপর বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নে নোবেলজয়ীদের নাম। ২০২২ সালে তিনি বিজ্ঞানী জিতে নিয়েছেন এ পুরস্কার। তারা হলেন ক্যারোলিন আর বার্তোজ্জি, ব্যারি শার্পলেস ও ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল। রসায়নকে কার্যকারিতার যুগে নিয়ে আসা ও ক্লিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করায় ব্যারি শার্পলেস ও মর্টেন মেলডালকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ক্যারোলিন বার্তোজ্জি ক্লিক রসায়নকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন, যা জীবন্ত অর্গানিজমে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি তার বায়োর্থোগোনাল প্রতিক্রিয়াগুলো এখন ক্যান্সারের চিকিৎসায় অবদান রাখছে।
বৃহস্পতিবার জানা যাবে সাহিত্যে নোবেলজয়ীর নাম। শুক্রবার জানানো হবে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কে বা কারা পাচ্ছেন। এরপর দুদিন বিরতি দিয়ে সবশেষ ক্যাটাগরি হিসেবে অর্থনীতিতে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার (১০ অক্টোবর)।
নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন
সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। প্রথম পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সালে। সেময় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সফল, অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তি। যদিও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।
প্রত্যেক পুরস্কারের জন্য সনদ ও সোনার মেডেলসহ এক কোটি ক্রোনা বা নয় লাখ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। ১৯০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬০৯বার এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
কারা আগেই জানেন বিজয়ীদের নাম?
শুধু বিচারকরাই জানেন কারা পেতে যাচ্ছেন নোবেল পুরস্কার। পুরস্কার ঘোষণার আগে অন্য কারো পক্ষে বিজয়ীদের নাম জানা কোনোভাবে সম্ভব হয় না। এমনকি বিজয়ীদের নাম ঘোষণার আগে ইঙ্গিত দেওয়া থেকেও বিরত থাকেন বিচারকরা। তবে এ বিষয়ে কিছু জল্পনা থাকে সব সময়।
কে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে?
বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন। এর মধ্যে থাকতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইন প্রণেতা, আগের নোবেল বিজয়ীও। তাছাড়া কমিটির সদস্যরাও আবেদন করতে পারেন। যদিও ৫০ বছরের আগে এসব মনোনয়নের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয় না।
কোথা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়?
শুধু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে। বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।