১২৮ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতা এমনই পিতা
এনামুল হক টগর
০৮/০৯/২০২১
আমি দিন মজুর,শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলীর ছেলে রতন,
ছোট ভাই মধু চায়ের দোকানে কাজ করে সারাদিন ব্যথার ক্রন্দন!
বাবা বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো লেখাপড়ার সুযোগ পেতাম,
ছোট ভাই নিয়মিত স্কুলে যেতো অবিরাম।
আমাদের একদিন ভালো চাকুরি হতো স্বনির্ভর জীবন।
কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রিয়তম পিতা শহীদ হলেন বেদনার মরণ!
বাবার স্বপ্ন ছিল আমরা সুশিক্ষার আদর্শে গড়ে উঠবো দৃঢ় দীপ্ত জাগরণ।
সোনার মৃত্তিকা ফসলে-ফসলে ভরে উঠবে নতুন চেতনার সাম্য আহ্বান।
অভাব মুক্ত সংসারের পথ ধরে আমরা হেঁটে যাবো আর্দশ জীবন সম্মান।
ধনী ও দরিদ্রের সারিতে সমান অধিকারে বন্ধু হবো প্রিয় স্বজন।
নিরন্তর বাঁশির ধ্বনিতে প্রিয়তম জন্মভূমি অনন্ত ছায়া দেবে শান্তি,
প্রবাহমান নদীর বাঁকে ঘামঝরা কৃষাণ-মাঝি গান গাইবে প্রশান্তি!
নিসর্গ বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত আনন্দে ভরে উঠবে ভ্রাতৃত্বের মহা-বন্ধন।
রোমাঞ্চিত চিত্রকর্মে কুঁড়িগুলো ফুল হয়ে ফুটে উঠবে সুগন্ধি চন্দন!
বৈচিত্র্যেময় বীজের বপনে শস্য সমৃদ্ধি হবে দৌলত ভাণ্ডার।
সুললিত অরণ্যের শরীরে পাখিরা গান গাইবে সু-মাধুর প্রেম সংসার।
স্বাধীন জন্মভূমি স্বর্গরাজ্যের পুষ্প উদ্যানে প্রস্ফুটিত হবে মানবতার দ্বার।
ঐশ্বরিক ভালোবাসা ও সূর্য কিরণের জ্যোতিতে নতুন প্রাণ হবে উদয়।
কিন্তু সব ব্যর্থ হয়ে গেলো,সব ব্যর্থ হয়ে গেলো,স্বপ্ন বিফল অবক্ষয়!
চারিদিকে দূর্নীতি সন্ত্রাস মাদক গুম খুন লাশ আর লাশ!
পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শত্রুরা হত্যা করলো ভয়ংকর সন্ত্রাস।
প্রেমহীন শ্রেণি বৈষম্য ঘাতকদের দাপটে আহত ক্ষত-বিক্ষত হলো জীবন,
দেশ সমাজ জাতি ও মানবতার প্রজ্ঞা কল্যাণ।
দ্বিধাবিভক্ত সময়ের আঁধারে জীবন কেঁদে উঠলো দাউ-দাউ অগ্নি অনল!
শুধু আক্রমণ কলহ আর কুটিল কালের অসন্তোষ অশনি ফলাফল গড়মিল।
দূর্যোগ মহামারি দূর্ভিক্ষ ও অভাব অনাটনের তীব্র দহন আষ্ফালন।
অসহায় নীরব অপ্রতিবাদের স্বদেশ দাঁড়ায়ে রইলো বিপন্ন,
অপরিপক্ক শস্যদানা প্রত্যাশাকে ব্যর্থিত করলো কঠিন যন্ত্রণা!
নিরাপত্তাহীন আঁধারে ডুবে যেতে লাগলো স্বাধীনতার সুফল নির্মাণ,
স্বাধীনতা বিরোধী কালু মন্ডল এখনও গ্রামের ধনি বিত্তবান।
যুদ্ধে সময় অনেক টাকা ও সম্পাদ লুট করেছিল আছে প্রমাণ।
তদবীর করে ছেলের নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছে নকল সম্মান!
চাকুরির জন্য কালু মন্ডলের উত্তরসূরীদের জীবন এখন প্রসন্ন চাঁদ।
আমি দিন মজুর মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলীর সন্তান ক্ষুধার্ত দেহে গভীর আর্তনাদ!
সংসারে দাউ দাউ আগুন কঠিন দুঃখ কষ্ট অনাহারী জীবন বিবাদ!
ছোট ভাই কিশোর শ্রমিক দোকানের কর্মচারী আঁধার ক্লান্ত জীবন।
বীরঙ্গণা বোনটি সেই যে ঘর ছেড়ে চলে গেলো অভুক্ত প্রাণের ভীষণ ক্রন্দন।
সে আর কোনদিন ফিরে আসেনি,কেউ তার খোঁজও রাখেনি সংসার সন্ধান!
শুনেছি সে এক নিষিদ্ধ পল্লীতে জীবন করছে ধারণ !
এই চন্দ্রবতী নদী, এই বুড়িগঙ্গা নদী,এই ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদী।
এই প্রিয়তম ফসলের মাঠ, এই সবুজে সবুজে বৈচিত্র্যেময় আবাদ!
এই খানে এই মাটিতে যুদ্ধে সময় বিপন্ন,
বাবা ও স্বজনের রক্তাক্ত লাশ পড়েছিল আহত ক্ষত বিক্ষত বিষণ্ণ!
পাশের শহরে কবি মেহেরুনকে ঘাতকরা গুলি করে হত্যা করেছিল,
সেই স্বাধীনতা বিরোধী শত্রু দালালরা এখনো জীর্ণ দানব কুটিল।
আজ সকালে আবু মিয়ার ছেলে নেশায় মাতাল সবুজ,
মাদকের টাকার প্রয়োজনে মা ও বোনকে হত্যা করেছে পাষাণ অবুঝ।
গতকাল জমি-সংক্রান্ত বিরোধে ভাই হয়ে ভাইকে খুন করেছে কি সন্ত্রাস নিষ্টুর ।
মাজেদের কিশোর ছেলে সাব্বিরকে অপহরণের পর নির্মম আঁধার,
মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ার কারণে ঘাতক শত্রুরা তাকে অবাক,
নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে অত্যাচার জুলুমে নির্বাক।
যৌতুকের টাকার অত্যাচারে প্রতিবেশি রাবেয়া অসহায়,
স্বামীর হাতে নিষ্ঠুরভাবে খুন হয়েছে কি যে হিংস্র নির্দয়।
ঈদের জামা কিনে দিতে না পেরে আখের আলী নির্জনে নিষ্ঠুর!
তার দুই শিশু সন্তানকে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছে মৃত্যুর হাহাকার-
এ-এক নির্মম হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক যন্ত্রণার করুন আঁধার!
বধির কিশোরী প্রকৃতির ডাকে স্কুল ছেড়ে পাশের বাড়িতে গেলে একা,
ঘাতক বাড়ির মালিক তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে অত্যাচারী বিবেক।
কয়েক মাস আগে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে বিপদজনক অসহায়,
সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হলে পিতা প্রতিবাদ করায়,
ঘাতকরা তার মুক্তিযোদ্ধা পিতাকে হত্যা করেছে কঠিন নির্দয়।
এমন স্বাধীনতা তুমি দিয়েছো পিতা?এমন স্বাধীনতা তুমি দিয়েছো পিতা?
যুদ্ধের সময়ও মুক্তিযোদ্ধারা গরীব ছিল
এখনও তাঁরা দরিদ্রই ক্ষাত বিক্ষত!
তোমার বুকে শুধু জ্বালাও পোড়াও গুম খুন ক্রসফায়ার নিত্য।
পেট্রোল বোমায় দগ্ধ জীবন অসহায়ের কান্না রক্ত লাশ।
মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসের ছেলে রফিক এখনো নিরুপায় রিকসা চালায় বেদনায় হতাস।
ত্রিশ লক্ষ শহিদ হত্যাকারী ঘাতক শত্রু দালালরা,
এখনো কালো টাকায় প্রবল শক্তিধর।
কখনো কখনো ওরা দেশের ক্ষমতাধর হয়! গাড়িতে পতাকা উড়ায় জটিল ইতিহাসের অধ্যায়!
এ-যেন পৃথিবীর এক দুঃখ ও বেদনাভরা বিপন্ন বিষণ্ণ রহস্য।
মহৎ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোহর আলীর ছেলে আমি,
হেঁটে যাই মাতৃভূমির প্রতি বিনয় বিশ্বাস আগামী-
আগে ও পিছে ধৈর্য ধারণ করি সুন্দরের অপেক্ষায়,
মুক্তিযোদ্ধারা অনন্তকালের আর্দশ বীজ বপণকারী মানবতার পরিচয়।
অন্যায় অত্যাচার মাদক ক্যাসিনো সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ,
আর লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ ন্যায়পরায়ণ প্রতিবাদ।
পরস্পরা বংশধর বহুদূর সভ্যতা ও সেবার ঐক্যে আর্দশ পথ।
মুক্তি ও শান্তির বার্তা নিয়ে ছুটে যাই,ছুটে যাই অথই প্রান্তরে সুদূর রথ।
ঐ দূর আকাশ দিগন্ত মাঠ নদী গ্রাম পেরিয়ে বহুদূর নগর-
লাল সবুজ রক্তে আঁকা জাতীর প্রিয় পতাকা উড়ে সুন্দর।
দীপ্ত জীবন নব নব সংস্কারে আধুনিক বার্তা বাহক নির্মাণ নিপুণ।
আনন্দ ও বেদনায় প্রিয় জন্মভূমিকে কানে কানে বলে শোন!
হে বিদগ্ধ স্বাধীনতা হে বিদগ্ধ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কথা শোন!
হে প্রিয়তম মাতৃভূমি,হে প্রিয়তম স্বদেশভূমি,জ্ঞান দাও আলো জ্বালাও।
হে প্রিয়তম পিতা,হে প্রিয়তম জননী জীবনকে দীপ্তিময় চৈতন্যে জাগাও।
আর বলো স্বাধীনতা এমনই পিতা,স্বাধীনতা এমনই দেশপ্রেমের মহৎ সাধনা।
স্বাধীনতা এমনই সুন্দরের আনন্দ গৌরব মর্যাদা সম্মান।
স্বাধীনতা এমনই স্বজন হারানো গভীর বেদনা ব্যথার ক্রন্দন।