১৫৪ বার পড়া হয়েছে
একটি বইয়ের আত্মকাহিনি
গুলশান কবীর
আমার নাম ‘তোমার চোখের জল’। আমার জনকের নাম হুমায়ূন কবীর ঢালী। এবছর আমার ৩০ বছর পূর্ণ হলো। আমার খুব আনন্দ লাগছে ৩০ বছর পূর্ণ করতে পারায়। সাধারণত বাংলাসাহিত্যে বিখ্যাত লেখকদের ভালো বই ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারেনি। যেমন বাংলাসাহিত্যে টিকে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ অনেক লেখক। এসব লেখকের বই এখনো দাপটের সাথে বিচরণ করছে পাঠকদের মনে।
এদের পরেও অনেক লেখকের বই রয়েছে যা টিকে গেছে এবং টিকে থাকবে। এই তালিকাও ছোট নয়। শওকত ওসমান, মাহমুদুল হক, আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলী, সুনীল গঙ্গোপাধায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ূন আহমেদের কিছু বই রয়েছে, যা কালের ইতিহাসে টিকে গেছে এবং থাকবে।
হায়রে, ধান বানতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে ফেলছি। বলছিলাম আমার কথা। আমার জন্ম ১৯৯১ সালে বাংলাবাজারের ‘শিব্বির প্রকাশনী’তে। ১০ বছর পর্যন্ত ওখানেই থাকি। এরপর চলে আসি পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-এ। ২০০১ সালে। এখানেও প্রায় ১০ বছর কাটে আমার। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. আমার পাঁচটি এডিশন প্রকাশ করে।
এরপর ২০১৩ সালে আমার বাংলাপ্রকাশ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এখন আমাকে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাপ্রকাশে। তবে এখানেও বেশিদিন থাকব বলে মনে হয় না।
আমার জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকার কথা নয় কারও। জনপ্রিয় না হলে কেউ এতদিন টিকে থাকতে পারে না। আমি কতটা জনপ্রিয় তা জানলেও বলা যাবে না। যেমনঃ মেয়েদের বয়স, পুরুষের বেতন, পত্রিকার সার্কুলেশন নাকি জানানো ঠিক নয়। কিংবা জানতে চাওয়া অনুচিত। কে এই নিয়ম করেছে জানা নেই। তবে যে-ই এই নিয়ম করেছেন কাজটা ভালো করেননি।
প্রতিদিন আমার বয়স যেমন বাড়ছে, আমার দামও বাড়ছে। বাড়বে না কেন, কোন জিনিষের দাম বাড়ছে না, আপনারাই বলুন। প্রথমে আমার দাম ছিল ৫০ টাকা। এরপর ৮০ টাকা। এখন আমার দাম ২০০ টাকা। আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন, ৮০ টাকা থেকে একলাফে দাম ২০০ টাকা কী করে হয় ! হয় গো হয়। আমাদের দেশে সবকিছু একলাফেই দাম বাড়ে। এর অধিকাংশেরই যুক্তি নেই। তবে আমার যুক্তি আছে। ৩০ বছর আগে যে জিনিস আপনি ৫০ টাকা দিয়ে কিনেছেন, এখন কত টাকা দিয়ে কিনছেন? এছাড়া আমার ওজনও কিন্তু বেড়েছে। আগে ছিলাম ৮০ পৃষ্ঠা, এখন ১৪৬। আমার জনক হুমায়ূন কবীর ঢালী ১৫ বছর আগে আমাকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন।
আমি যখন জন্মগ্রহণ করি, তখন আমার জনক পত্রিকায় আমার কথা প্রচার করেছিলেন এই বলে,
‘তোমার চোখের জল একটি জনপ্রিয় উপন্যাস।
কারও কাছে এটি একটি প্রেমের উপন্যাস।
কারও কাছে একটি রাজনৈতিক উপন্যাস।
কারও কাছে একটি বাস্তব সমাজচিত্র।’
আমার সম্পর্কে জনক যা বলবেন তাই ঠিক। তিনিই তো আমার সম্পর্কে ভালো জানবেন। কোনো এক দৈনিক পত্রিকায় আমাকে নিয়ে আলোচনায় লিখেছেন, ‘বইটির পটভূমি হচ্ছে, এক মন্ত্রীর সাথে এক ছাত্রনেতার দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। না, নীতির দ্বন্দ্ব কিংবা সংঘাত নয়; দ্বন্দ্ব এক প্রমোদকন্যাকে ঘিরে…’
কয়েকদিন আগে আমার জনক হুমায়ূন কবীর ঢালী তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে আমার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর আনন্দ-অনুভূতি প্রকাশ করে লিখেছিলেন,
‘একজন লেখক হিসেবে ‘তোমার চোখের জল’-এর লং জার্নি ভালোই লাগছে। একটি উপন্যাস নিয়মিত প্রকাশ হওয়া এবং পঁচিশ বছর ধরে পাঠকের প্রিয় গ্রন্থে ঠাঁই পাওয়া প্রকাশকের কাছে যেমনই হোক, লেখক হিসেবে অবশ্যই আমার কাছে সুখকর অনুভূতি।’
জনকের মতো আমারও কম আনন্দ নয়। আমিও খুশি ৩০ বছর ধরে টিকে থাকতে পেরে। আমি দেখতে কেমন, আমার মান কী, এসবের আলোচনা-সমালোচনা করবেন আমার পাঠকগণ। তবে আমি চাইব, আগে আমাকে পড়ুন, পরে আলোচনা-সমালোচনা করবেন। আমাদের দেশে একটা নিয়ম দেখছি, কোনোকিছু না জেনেই সমালোচনা করে। এটা ঠিক নয়।
প্রিয় পাঠক, আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন এবং বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে আপনাদেরকে ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন, আমাদের সাথে থাকুন।