একজন নীলা ও তার আড়ালের জীবন
জেবুন্নেছা জেবু
মাত্র ছাব্বিশ বছরের নীলার জীবনে ঘটে যাওয়া বিস্তর ঘটনার অভিজ্ঞতায় পাথর হয়ে গেছে তার মন কিছুতেই আর কান্না আসে না।
তার প্রথম স্বামীর চরিত্রহীনতার কারণে যখন ছাড়াছাড়ি হয় তখন সে এক সন্তানের মা। নীলা শুরু করে কাপড়ের ব্যবসা, অনলাইন জগতে টিকে থাকার লড়াই। প্রতিদিন লাইভ ভিডিও তে কাপড়ের প্রদর্শন করে জীবন চালানো পরিশ্রমী মেয়েটি আবার ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে।
ভালোবেসে দ্বিতীয় বিয়ে করে এবার বাচ্চা সহ। বিয়ের সকল রীতি রেওয়াজ শেষে নীলা বুঝলো তার স্বামীর পক্ষে সম্ভব নয় সাংসারিক খরচ চালানো । তাই খুব মনোযোগ দিয়ে ব্যবসা শুরু করে।
ব্যবসা বড় হলো দুই একজন কর্মচারী রাখলো। ইতিমধ্যে সে আবার মা হবে বলে একটা কাজের মেয়ে রাখে।
গোপনে মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে নীলার অতি বুদ্ধিমান স্বামীটি। নীলা তার স্বামীকে বিশ্বাস করে খুব।
সদ্য এক ফুটফুটে ছেলে সন্তানের মা হলো নীলা। নীলাকে সংসারের সব খরচ এর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে দিব্যি আরামে কাজের মেয়ের সাথে গোপনে সম্পর্ক ছাড়া ও ফেসবুকে অসংখ্য নারী নিয়ে মেতে থাকা স্বামীর সাথে প্রায় ঝগড়া হয় নীলার।
ভাবছে আগের স্বামী অনেক ভালোই তো ছিলো, এই ভুল এর উপর আরেক ভুল কেনো হলো তার সাথে।
তারপর বর্তমান স্বামীর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে পাগল প্রায় মেয়েটি তার স্বামীর নিখুঁত অভিনয়ে সব ভুলে যেতে চায়, সে যা বলে তাই করে।
সদ্য নবজাতকটি নির্মম ভাবে খুন হলো। কে মেরেছে সে রহস্য নীলার অজানা।
বাচ্চা আর স্বামীর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যখন সে পাগল প্রায় তখন তার স্বামী তাকে পরিচালিত করা শুরু করে। এমনভাবে তাকে প্রকাশ করছে যেনো তার সবকিছুই মানুষ ভুল বুঝে, নেগেটিভ ভাবে নেয়।
সত্যি বিস্ময় কর মনুষ্য জাতি। এতো বড় একটা মানুষের শরীরের সবচেয়ে ছোট একটা অংশের কামনায় ধ্বংস হয় কতো সংসার।
মানুষ নফস কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হারাবার কারণে ধ্বংস হচ্ছে হাজার হাজার সুন্দর সংসার সম্পর্ক। কারণ স্রষ্টার ভয় না থাকা আর ধার্মিকতা হতে দুরে যাওয়া।
যা ইচ্ছা তাই করার প্রবণতা মানেই হলো পশুত্ব অর্জন।
যে স্বামীকে আরামে বসিয়ে খাওয়ানোর জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করে স্ত্রী নীলা তারই বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করে সামাজিক ভাবে সুখী হবার অভিনয় করে যাওয়াটা কতোটা মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক?
সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতকের অমানবিক মৃত্যু সত্যি এক মায়ের জন্যে মৃত্যুর সমান কষ্টের।
আড়ালে যাই হোক নির্মম সত্য হলো — নীলা হারিয়েছে স্বামীর প্রতি বিশ্বাস, হারিয়েছে বাচ্চা, হারিয়ে ফেলেছে মানসিক শক্তি ।
এতো অল্প বয়সে জীবন সংগ্রামে সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রেখে হাসতে হচ্ছে তার আরেকটি সন্তানের জন্যে। বাচাঁর জন্যে বেচে থাকা নীলাদের দোষ ধরা সমালোচনা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। সহানুভূতিশীল হোক সবার জন্যে মানুষের পৃথিবী।।