“এইসব দিন রাত্রি “
ছোট গল্প
মা দিবসের নিবেদন
শাহানা জেসমিন
জীবন এতো ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র জীবনে কত সৌন্দর্য উপভোগ করছি। কত সৌন্দর্য দেখিনি চক্ষু মেলিয়া। জীবন এতো ছোট্ট ,সময় এতো কম,আয়ু এত ধরা বাঁধা এটা ভাবলে মন খারাপ করে, চোখের কোনে জল জমে।
একটা মন খারাপ পাখি বুকের মাঝে ছটফট করে,একটা কচ্ছপের আয়ু আমাদের থেকে বেশী। একটা বৃক্ষের আয়ু আমাদের থেকে বেশি। আমরা এত কম সময় নিয়ে কেন এলাম এত সু্ন্দর পৃথিবীতে আহা।
স্বল্প আয়ুতে পৃথিবী সুন্দর আর জীবন সুন্দর।
নিশুতি রাতের বুকে ঢেউ খেলে যায় দূরের জেলখানার ঘন্টায় পেরোনের সময় আবর্তে। আর নদীর জলের ঝিলিমিলি পানিতে ফিরে যায় সেই লুকানোর শৈশব। সেন্ট্রাল জেলের প্রাচীর ঘেঁষে যে সরু রাস্তাটা মিশে একাকার হয়ে যায় অতীত সাথে নিয়ে। দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যে ইউকেলিপ্টাস যেনো সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকে মৃত্যুর মতোন একা। আর সবুজ কচি পাতারা তখন বড্ড আদুরে থাকে।
কাকভোর তখন হারিয়ে যায় সময়ের গহবরে। সেই সকালে বের হয়ে যাই , দুপুর হারিয়ে যায়। রোদের অলংকার গায়ে জড়িয়ে ধরে সময় বয়ে যায়। আর অফিসে এসে হঠাৎ মনে পড়ে কী আশ্চর্য আজ ঘরে কোন বাজার নেই, এক ফোঁটা তরিতরকারি নেই। আর অনেকদিন চিঠি লেখা হয় না মাকে।
“মা আমি ভালো আছি, আরও কত-কী …”
চিঠি ভাঁজ করে বাইরে তাকালাম তখনও রোদ ঝলমলে চরাচর। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি। রাসের সময় খুব ধুমধাম। বাড়ির উঠোনে কোন দিন কৃষ্ণযাত্রা, কোন দিন কীর্তন। পাড়াপড়শির ভীর গলে যায়। নদীর বুকে বজরায় দেখি নানা আয়োজন।
শৈশবের আইসক্রিমওয়ালার টুংটাং শব্দে চৈত্রের রোদ ভিজে খাঁ খাঁ করে। ভুল বাক্যে শব্দে কবিতার ডায়েরির পাতা মায়া ছড়ায়। বিষাদ নীল জামদানী প্রবীণ দুঃখ কনা ফুটে থাকে শরীরে। অসংখ্য প্রজাপতি, ঘাস ফড়িং, জল ফড়িং, গঙ্গা ফড়িং উড়ে যায় পরিযায়ী সময়ে বুকের ভেতর যাযাবর নাইটিংগেল পাখির সুর তুলে। রাত নামে ঘন হয়ে বুকের ভেতর বিপাশা নদীর ঢেউ তুলে তখন শৈশবের দুরন্তপনায়। ঝরা পাতার ফিসফিসানি ভোরের দোয়েলের সঙ্গে আর সে পাতাদের মাড়িয়ে চলে যায় কোন সে পথিক।
অলস চৈত্রের সেই শৈশবের দর্জি বাড়ি থেকে কুড়িয়ে আনা ছিটকাপড় দিয়ে পুতুল বানিয়ে তাকে বিয়ে দেয়া আর জুতোর প্যাকেটে অতি যত্নের সাথে তুলে রাখা। মাঝরাতে লুকিয়ে লুকিয়ে পুতুল বৌ দেখা সেতো সেই হিজল বনের গহীনে স্মৃতি বুকের ভেতর তোলপাড় করে বিপাশা নদীর ঢেউয়ের মতোন। বৈশাখের কাঁচা কড়া আমি ভর্তা কাসুন্দি মাখিয়ে আজো সেই ব্যাক্তিগত মালিকানা একান্তই নিজের। আর মায়ের বারোহাতি ফুল ফুল সুতি শাড়ি প্যাচিয়ে পড়া ভাব খানা মার আদলে এখনো বুকের ভেতর ষোলআনা সুখ। সেখানে পয়ষট্টি বছরের পুরনো ভিন্টেজ বেনারসি পাটোলা শাড়ি যার সাথে রুপার সুতো আর খাদি সিল্কের উপর একটি সোনার ইলেকট্রোপ্লেটিং করা। আর যার সাথে ব্যাবহার নয়টি রঙের। শাড়ির রঙের প্রতিফলন ঘটে শরীরে । আর সেখানে মায়ের ফুল ফুল শাড়ি একান্তই নিজের মালিকানা সুখ। যেখানে হলোগ্রাফিক বুস্টিং টপ বানারসি ঐতিহ্য ছাড়িয়ে যায় মায়ের সেই বানারসি বিয়ের শাড়ি। মায়ের পড়নের বানারসি বিয়ের শাড়ি এখনো হিজল সুখ।