সীমার সীমাহীন বিড়ম্বনা
ইসরাত রুবাইয়া
সীমা বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যেত প্রতিদিন। খুব মিষ্টি হাসি খুশী মেয়ে। কখনো দেখিনি রাগ করতে। কালো হলেও দারুণ চেহারা, চোখ দুটি বড়ো বড়ো আলাদা একটা সৌন্দর্য বিরাজ করে তাতে অনেকই আসতো স্কুলে।একজনে সাথে প্রতিদিন কথা হতো। সেও তার বাচ্চা নিয়ে স্কুলে আসতো। সে ছিল একজন কুচরিত্রের লোক। কি আর করার সমাজে বাস করতে হলে ভালো মন্দ সবার সাথে মিশতে হয়। কথাও বলতে হয়। খুব প্রভাবশালী ছিল সে লোক। দেখতে খুব সুন্দর। সীমা ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে। ভাবতো তার সাথে দেখা না হলেই ভালো। মাঝেমধ্যে ওর বউ আসতো স্কুলে বাচ্চা নিয়ে। সে দিন সীমা খুব খুশি হতো। মনে মনে বলতো আল্লাহ বাঁচাইছে জানোয়ারটা আজ আসেনাই। শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে”ভাবি ভালো আছেন। আপনি স্কুলে আসতে পারে না?”ওর বউটা ছিল খুব ভালো মেয়ে। তার উত্তর”ঘরে অনেক কাজ থাকে তাই তোমার ভাইকে দিয়ে পাঠাই।সে গ্রামের বাড়িতে গেছে তাই আমার আসতে হলো।”স্কুল ছুটি হয়ে যায় বাড়ি চলে আসে সীমা।মনে ভয়টা বাসা বেঁধে থাকে। কি করবে সীমা স্কুলে বাচ্চা নিয়ে যেতে হবে আর ওর সাথে দেখা হবেই। দেখা হলে নিজে এসেই কথা শুরু করে।” মেডাম আজ খুব সুন্দর লাগছে দারুণ তো আপনার চোখ দুটি মাতাল করে আমায়।”
সীমা নিচের দিকে তাকিয়ে দুচোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে খোদা এই জানোয়ার স্কুলে আসে কেন।
কি হলো মেডাম কথা বলছেন না কেন?
সীমা নিজেকে সহজ করে মুখ তুলে একটু হেসে বলে “কি যে বলেন ভাই আপনার চোখ মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে।ভাবি কত সুন্দর আর আমি তো কালো ভূত।”
স্কুল ছুটি হয়েযায় সীমা বাচ্চা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। তার মাথায় চিন্তা ঘুরতে থাকে কি ভাবে ওর এই সব অসভ্য আচরন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। স্বামীর কাছে বলেনা,পুরুষ মানুষ ঝগড়া বিবাদ হয়ে যেতে পারে। নিজের সমাধান নিজেকে করতে হবে। তারপর মানসম্মানের ব্যাপার।
নিজের সমাধান নিজেকে করতে হবে। তারপর মানসম্মানের ব্যাপার।।সীমা সীমাহীন চিন্তায় হাবুডুবু খেতে থাকে। কি করবে এসব কথা কাউকে বলা যায় না। সীমাকে এমন এমন কথা শুনতে হয়েছে তা আমি লিখিলাম না। মূল কথাটা বলে শেষ করে দেই।তারপর একদিন সীমা বাচ্চা নিয়ে স্কুলে গেছে । যথারীতি কথা হচ্ছে এক সময় জানোয়ারটা বলে উঠে মেডাম আমার খুব শখ ছিল আপনাকে নিয়ে একদিন ঘুরতে যাবো নতুন গাড়ি কিনেছি।সীমা মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।কি দেবে উত্তর সহসা মুখ নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে গালি দিয়ে মনের আগুন নিভাতে চেষ্টা করে।
“কি মেডাম কথা বলছেন না কেন?”
সীমা মুখ তুলে একটু হেসে বলে” আমি তো গাড়িতে উঠে পারি না আপনি যদি প্লেন কিনেন তাহলে আমি আপনার সাথে ঘুরতে যাবো, দূর আকাশে।কেউ দেখবেনা।সারা আকাশ আপনার সাথে ঘুরে বেড়াবো। আগে প্লেন কিনেন তারপর আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করবেন।”
জোর শব্দ করে হেসে উঠে লোকটা। সীমা ভয় পেয়ে যায়।
“সেলুট তোমায় নারী। আমি প্লেন কিনতে পারবো না আর তোমায় নিয়ে ঘুরতে যেতেও পারবো না।”
স্কুল ছুটি হয়ে যায়। সীমা বাচ্চা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। পরে স্বামীকে বলে”তুমি ওকে স্কুলে দিয়ে যেও আমি ছুটির পাঁচ মিনিট আগে গিয়ে নিয়ে আসবো। ঘরে অনেক কাজ থাকে শুধু শুধু কুলে গিয়ে বসে থাকা। এরপর সীমার আর তার সাথে দেখা হয়নি