আমরাই পারি
দিল আরা বেগম
সবুজেঘেরা ,ছায়া সুশীতল সুন্দর একটি গ্ৰাম । সেই গ্ৰামে এক প্রান্তে একটি বাড়ি ছিল, বাড়ির পাশেই ছিল একটি নদী । বর্ষাকাল , নদী একদম ভরপুর। নদীতে নৌকা চলে পাল তুলে।মাঝি গান গায় মনের আনন্দে । গোয়ালারা বিশাল নৌকায় বড় বড় বালতি ভর্তি দুধ নিয়ে যায় শহরে বিক্রির জন্য। মুখে ভরা হাসি নিয়ে জোরে জোরে শব্দ করে অনেক জন মিলে নৌকা বেয়ে রায় । নদীর এক ধারে জেলে মাছ ধরে । জাল থেকে মাছ উঠানো সে কি দৃশ্য ! মাছ গুলো যেন চিক চিক করছে। এ যেন প্রতি দিনের দৃশ্য। প্রতিদিনের এ দৃশ্য দেখে দেখে যেন নদী পাড়ের মানুষের সাথে তাদের একধরনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বড় সুন্দর সেই গ্ৰাম ।
নদীর পাড়ে একদল শিশু কিশোর -কিশোরী প্রতিদিন ই খেলা ধুলা করে । কেউ প্লাষ্টিকের ফুটবল দিয়ে খেলে,কেউ বুনো ফল বা খড় দিয়ে বল বানিয়ে ক্রিকেট খেলে । কেউ কচুরি ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় দিয়ে পুতুল খেলে, কেউ বা দড়ি লাফ খেলে । এত সবার মধ্যে একজন কিশোরীকে দেখা যায় বই, খাতা হাতে নিয়ে গাছের ছায়ায় একটু দূরে লেখা পড়া করছে । এদৃশ্য টি প্রায়ই দেখা যায় । এটি লক্ষ্য করেন গোয়ালাদের একজন । ঠিক গোয়ালা নয়, খামার মালিক বলা যায় । ইনি মাঝে মাঝেই শিশু , কিশোর কিশোরীদের সাথে কথা বলেন। ছেলে মেয়েরা ও নদীতে দুধের নৌকাটি দেখে খুশি হয়ে যায় । তারা মোটামুটি অপেক্ষায় থাকতো কখন ঐ নৌকাটি আসবে সুর করে গাইতে গাইতে। এভাবেই চলছিল গ্ৰামের ছেলে মেয়ে এবং নৌকার দুধ খামারীদের বন্ধুত্ব ।
হঠাৎ একদিন দেখে সব ছেলেমেয়েরা খেলছে কিন্তু গাছের নীচে বই খাতা নিয়ে সেই মেয়েটি নাই । এভাবে তিন চার দিন পর খামার মালিক নৌকা টি থামায় নদীর তীরে। তারপর তিনি নেমে ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলে এবং জানতে চায় মেয়েটি সম্পর্কে ।ওরা বলে,””ওকে কাজে দিয়েছে ‘ওমপুরত’,মানে রংপুরে । ওর বাপ ‘অঠে ‘মানে ওখানে বিড়ির কারখানায় কাজ করে । ” ওরা ওদের ভাষায় বলছে,ওদের তো খুব অভাব, অনেক ভাই বোন ,ঘরেও জায়গা হয়না। এই জন্যই তো গাছতলায় বসে পড়াশোনা করতো । স্কুলের আপা ওকে অনেক আদর করতো। ও পড়াশোনায় ভাল ছিল । আপা ওর মাকে অনেক বুঝিয়েছে । আপার কথা ওর বাবা মা শুনে নাই।
কথাগুলো শুনে খামার মালিকের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কারণ সে এক সময় শিশুদের নিয়ে কাজ করতো। সে জানে শিশু বান্ধব পরিবেশ শিশুর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা কতটা জরুরি । শিশুর প্রয়োজন কী! শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কী ? এ গুলো ভাবতে ভাবতে নৌকায় গিয়ে বসে । নৌকা আবার চলতে থাকে । কিন্তু সে ভাবনা থেকে যেন সরতে পারছে না ।নৌকা চলছে , সাথে সাথে তার ভাবনার নৌকাও পাল তুলে আরো গভীরে চলে যাচ্ছে । তিনি ভাবছেন , শিশুদের জন্য সরকার তার অধিকার ,তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।কিন্তু এগুলো দেখার লোক নেই ,বাস্তবায়ন নেই । শিশুর এ ধরনের ঝুঁকি পূর্ণ কাজের জন্য কত ধরনের ক্ষতি হয় ,কত ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে জীবন নষ্ট হয়ে যায়। এটা যদি ওরা বুঝতে পারতো ! ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য শিশুর নিউমোনিয়া ,কাশি, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ , যকৃতের নানা সমস্যা ও জটিলতা হয়ে থাকে এ ছাড়াও হাতে ,আঙ্গুলে , পায়ে ,গায়ে নানা ধরনের চর্মরোগ হাঁপানি, দৈহিক ক্ষত, র্দুঘটনা জনিত নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে । একটি শিশুর ছোটবেলাতেই যদি এত শারিরীক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বড় হয়ে সে কী করতে পারবে !
এখন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গুলো সম্পর্কে ওদের তো ধারনা ও নেই ,বুঝবে কী করে ? ওরা তো জানে না যে ধূলিকণা, ধোঁয়া,কম্পন,তাপ,শীতল,অগ্নি ,গ্যাস থাকে এমন পরিবেশে কাজ করা , ভারি ও বিপজ্জনক যন্ত্রাংশে ব্যবহারের কাজ, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের কাজ, পাথর ভাঙ্গা , ইট ভাঙ্গা শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ,বিভিন্ন কেমিক্যাল কারখানার, প্লাষ্টিক কারখানা ইট ভাটা ,বালূ উত্তোলন ইত্যাদি কাজ শিশুর জন্য ক্ষতিকর । এমন কি বাসা বাড়ির কাজ সহ আরো অনেক ধরনের কাজে জড়িত থাকাই শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৩৮-৪৩ধরণে কাজকে শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। এরকম নানা বিষয়ে ভাবতে ভাবতে নৌকা তাদের বাড়ির ঘাটে এসে পৌঁছায়।
লোকটি নৌকা থেকে নেমে বাড়িতে যায় । ঘরে আসার সাথে সাথেই তার ছোট্ট মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে । ‘বাবা এসেছো ! আমার জন্য কি এনেছো ? ‘ সে তখন চকোলেট , নানা ধরনের খাবার বের করে দেয় । বড় মেয়ে আসে “বাবা আমার খাতা, পেন্সিল এনেছো ?’ বাবা ব্যাগ থেকে খাতা ,পেন্সিল আর সাথে একটি গল্পের বই বের করে দেয়। এ গুলো পেয়ে, মেয়ে তো মহাখুশি হয়ে বাবাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায় । তখন তার আবার সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে যায় । একই বয়সের শিশু আমার ঘরে আছে ,ওরা প্রয়োজনীয় সব পাচ্ছে এবং অতিরিক্ত জিনিষ পাচ্ছে কিন্তু মেয়েটি এত কষ্ট করে পড়াশুনা করেও, সেটা চালিয়ে যেতে পারল না। বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে । শুধুমাত্র বাবা মায়ের শিক্ষা ,অজ্ঞানতা ও অর্থনৈতিক কারণে ।
খেতে খেতে স্ত্রীর সাথে কথা বলছে । বার বার সে অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছিল । স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে? খুব আনমনা মনে হচ্ছে? ‘তারপর ঐ কিশোরী মেয়েটির লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাবার ঘটনাটি বলল । স্ত্রী শুনে বলল ‘এরকম তো বাংলাদেশের সব জায়গাতেই হচ্ছে । তৃণমূল পর্যায়ের কয়টা শিশু শিক্ষা, চিকিৎসা পুষ্টি পাচ্ছে? কত শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে,অল্প বয়সে অপুষ্ট শিশুর জন্ম দিচ্ছে । এই তো অবস্থা! তুমি একা এত ভেবে কী করবে ? শোন , আমাদের বড় মেয়ে এবার অংকে খুব ভালো করেছে। টিচারটা খুব ভাল।’ হ্যাঁ সেটা ঠিক আছে ! তার পাশাপাশি আমরা আমাদের মেয়ের সঠিক যত্ন নিতে পারছি এবং তার দুর্বলতা চিহ্ণিত করে ব্যবস্থা নিতে পারছি তার মন মানসিকতা বুঝে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারছি বলেই সে ভাল করছে । স্ত্রী বলল ,’তার মেধা আছে , বুদ্ধিমত্তা আছে ,পরিশ্রম করেছে এসব বলছো না কেন? ‘ হ্যাঁ অবশ্যই ! সেগুলো আছে তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই মেধা , বুদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা , এগুলো শানিত হয়; বিকশিত হয় । আর পরিশ্রম! পরিশ্রম করতে হলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকতে হবে ,পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। যেটা আমরা পেরেছি বৃলে মনে হয় ।” স্ত্রী তার সাথে একমত হয়ে বলল ,”তুমি ঠিকই বলেছো ।” এরপর তারা তাদের সংসারিক প্রয়োজনীয় কথা বার্তা আলোচনা করতে থাকে ।
পরদিন আবার নৌকা নিয়ে নদী দিয়ে দুধ বিক্রি করতে যায়। যাওয়ার পথে যখন ঐ বাড়ির কাছে , শিশু কিশোরদের কাছে যায় , তখনই ঐ মেয়েটির কথা মনে করে তার মনটা খারাপ হয়ে যায় ।
এভাবে কেটে যায় ছয় মাস । সে আগের মতই শিশু কিশোর দের সাথে ভাব বিনিময় করে যাতায়াতের সময় । মাঝে মাঝেই নৌকা থামিয়ে ওদেরকে টুক টাক মুখরোচক খাবার দিয়ে যায় । ওরা খুশি হয়ে যায় ।
একদিন দেখে মেয়েটি আবার এসে সেই গাছের নীচে বসে আছে ।অন্য ছেলেমেয়েরা ঠিকই আগের মত যে যার মত খেলা করছে । সে নৌকা পাড়ে ভিড়িয়ে নেমে যায় । তাঁকে নামতে দেখে ছেলে মেয়েরা একসাথে জড় হয়ে তার কাছে আসে । সে ওদের সাথে কুশল বিনিময় করে কিছু কথা বার্তা জিজ্ঞেস করে । কে কি করে জানতে চায় । কেউ বলে মাদ্রাসায় কেউ বলে প্রাইমারি স্কুলে কেউবা এনজিও স্কুলে পড়ে । কেউ কৃষিতে বাবার সাথে কৃষি কাজ করে, বাড়ি তে কাজ করে । তখন সে ঐ মেয়েটি কে ডেকে পাঠাল ওদের কে দিয়ে । মেয়েটি এলো । তিনি জিজ্ঞেস করলো,”তোমার নাম জবা? বলল “জ্বী” । তখন সে জিজ্ঞেস করল “কেমন আছো? জবা বললো ,’ভাল আছি ‘। এত দিন কোথায় ছিলে? কাজ করতে অংপুরত গেছিনু।” ।
তার কথায় যেটা বোঝা গেল তা , হচ্ছে মেয়েটি রংপুরে একটি বিড়ির কারখানায় কাজ করেছে। তার কাজ ছিল বিড়ি তৈরির কাজে সহায়তা করা । এজন্য তাকে তামাক পাতা, তামাকে গুঁড়া ধরে কাজ করতে হতো । এসব কাজ করতে করতে তার দুই হাতে একধরনের ঘায়ের মত তৈরি হয়েছে । যা দেখতে খুবই বীভৎস এবং খুবই ব্যাথা ও জ্বালা ও যন্ত্রনাদায়ক। যে কারণে সে কাজ করতে পারতো না ।তাই তাকে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে । এজন্য বাড়ি চলে এসেছে। ওর হাতের ঘা দেখে শিউরে উঠার মত অবস্থা । কোন ঔষধ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে, বলে এক ধরনের পাতা বেটে রস লাগিয়েছে । তখন সে সাথে সাথে তাকে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেয়ে ঔষধ পত্র কিনে দেয় । তারপর ঐ শিশু কিশোরদের সাথে তার বাড়িতে যায় । যেয়ে দেখে খুবই ছোট্ট একটি ঘর পাটখড়ির বেড়া ও খড় দিয়ে বানানো । সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো জীর্ন শীর্ন অবস্থার ২৪/২৫ বছরের একজন নারী । যে এই মেয়েটি সহ আরও চার জন সন্তানের মা। তার মায়ের সাথে কথা বলে জানা গেল , তার বাড়ি পাশের গ্ৰামেই । তাকে খুব অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়েছিল তার বাবা মা । তার শ্বশুর তাকে খুব শখ করে অল্প বয়সেই ছেলের বউ করে এনেছিল এ বাড়িতে। তখন বাড়ি অনেক বড় ছিল । সব নদীতে চলে গেছে। এখন এই ছোট্ট একটা ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। তখন সে ভাবে, শখের এক বাল্যবিবাহের জন্য আজ কত সমস্যা তৈরি হয়েছে ! তারপর সে তাকে কিছু টাকা দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে জবার চিকিৎসা ঠিক মত করার জন্য বলে । সুস্থ হলে ওকে আবার স্কুলে পাঠানোর জন্য বুঝিয়ে বলে । এবং লেখাপড়া খরচ বাবদ সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় । ‘মেয়েটির মা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।
তারপর সে নৌকায় গিয়ে বসে । নৌকা চলতে শুরু করে । তার যেন আজকে নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে এবং বেশ আনন্দ অনুভব করছে।
বাড়ি পৌঁছেই ঘটনাটি খুলে বললো স্ত্রীকে। স্ত্রী ও খুশি হয় । যাক, “তুমি মানষিক ভাবে শান্তি পাচ্ছো তো”! হ্যাঁ, আমার মাথায় আরো কিছু প্লান ঘুরছে এবং তাতে তোমার সহায়তা প্রয়োজন । তুমি করবে তো “! এরপর ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে মেয়েদের সাথে কথা বার্তা বলে গরুর খামারের দিকে চলে যায় ।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে বলে, ‘ আমাদের তো এ গ্ৰামে সবাই চেনে । সবাই সম্মান করে । আমাদের সমাজে একটা গ্ৰহণযোগ্যতা ও আছে ।আমরা কয়েকজন স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আমাদের সাথে নিব । আমরা সবাই মিলে কাজ ভাগ করে নিব । তুমি বাড়ির আশেপাশে যারা সুবিধা বঞ্চিত আছে তাদের সাথে কথা বলবে , আমি বাজারের আশেপাশে ও ছাত্র ছাত্রীরা আরো একটু দূরে যারা থাকে তাদেরকে নিয়ে সচেতনতা মূলক কাজ করবো। সপ্তাহের একদিন আমরা সকলে অভিভাবক বা বয়স্কদের আমাদের বাড়িতে ডাকবো বা দাওয়াত করবো । আমরা আমাদের বাইরের ঘরটা ব্যবহার করবো এ কাজের জন্য । মিটিংয়ের বিষয় থাকবে ইস্যুভিত্তিক । যখন যেটা প্রয়োজন মনে করবো তখন সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ,কথা হবে। এভাবে শিশুর শিক্ষা , স্বাস্থ্য, শিশু শ্রম , ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, শিশুর বিনোদন, শিশুর প্রতি আচরণ ,বাল্যবিবাহ ও বিভিন্ন দিবস উদযাপন,আলোচনা । এছাড়া পরিবেশ , মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম ও নানা সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী, সরকারি যেসব সুবিধা আছে সে গুলো সম্পর্কে জানানো হবে এবং আলোচনা হবে। এগুলো দিয়ে আপাতত শুরু করবো ।’ স্ত্রী বললো, “এটা তো অনেক ভালো উদ্যোগ । আমিও পাশে আছি তোমার”।
কয়েক দিন একটু পড়াশুনা করে হাতে লিখেই কিছু মেটেরিয়াল , পোস্টার বানালো । তারপর শুরু হলো নতুন কাজের পথ চলা । খুব সাড়া পরে গেল সবার কাছে । সবাই বিষয়টা খুব উপভোগ করলো । কেউ আলোচনা শুনে ,আর কেউ আলোচনায় অংশ গ্ৰহণ করে তাদের মতো করে । কেউ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে । তাদের সবার সাথে সম্পর্ক যেন আরো মজবুত হয় । ফলে উপকার ও পাওয়া গেল কিছু দিনের মধ্যেই । অনেকেই তাদের শিশু দের কাজ থেকে বাড়ি নিয়ে আসে এবং স্কুলে ভর্তি করে দেয় । শিশু অসুস্থ হলে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় । জীবন যাপনেও পরিচ্ছন্নতা আসে। প্রথম প্রথম চা বিস্কিট আমাদের বাড়ি থেকে দেয়া হতো । কিন্তু পরে তারা এতটাই উৎসাহিত হলো যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদা তুলে বিস্কিট নিয়ে আসতো । আমার বাড়ি থেকে চা বানিয়ে দেয়া হতো। এ কাজে যুবক ছেলেমেয়েরা ও খুব উৎসাহ পায় । তারা ও ভাল সময় কাটায় । তাদের মধ্যে ও একধরনের নেতৃত্ব তৈরি হয় । এভাবেই তাদের সচেতনতা মূলক কাজ টি একটির পর একটি বিষয় এগিয়ে যেতে থাকে ।
ওদিকে জবা ও নিয়মিত স্কূলে যায় । ঠিক মত পড়াশুনা করে ।ওর খাতা, পেন্সিল প্রয়োজনীয় জিনিস নিজের মেয়েদের সাথে একসাথে কিনে ওকে দিয়ে আসে । জবা নিজেই পড়াশুনায় ভাল ।তার সহযোগিতা পেয়ে আরও মনযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে থাকে ।
এক দিন মিটিং শেষে ঘরে এসে দেখে তার ছোট মেয়েটি কয়েকটি পুতুল সাজিয়ে রেখে ,খেলা করছে ।সবার সামনে বসে কি কি যেন বলছে ।।আর তার ছবি আঁকার খাতা দেখিয়ে কথা বলছে ।বার বার বলছে ‘”ঠিক আছে ?” আবার চা খেতে বৃলছে পুতুলকে । যা দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, সে তাদের মিটিং কে অনুকরণ করছে । বিষয়টি এতটুকু ছোট বাচ্চার উপর ও প্রভাব ফেলেছে ।দেখে তার খুব ভালো লাগে ।
রাতে সে বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে, একটি সুষ্ঠু , সুস্থ ও বৈষম্যহীন সমাজের গঠনের সবচেয়ে প্রারম্ভিক ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে সচেতনতা মূলক কাজ । আর এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া ও বটে।এই প্রক্রিয়ায় ছেদ পড়লেই আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। সুতরাং এ চলমান প্রক্রিয়া নিয়মিত ভাবে চালিয়ে যেতে পারি ‘আমরাই ‘। আমি ,আপনি আমরা সবাই। সেটা যার যার মতো করে , যেভাবেই হোক না কেন । আমরা সবাই যদি যে যার জায়গা থেকে নিজ নিজ এলাকার বা গ্ৰামের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে পারি তাহলে এসব শিশুরা ঝরে পড়বে না । শিক্ষার সুযোগ পাবে, শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত হবে।