আবু হেনা মোস্তফা কামাল মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা
জন্ম: ১৩ মার্চ ১৯৩৬
মৃত্যু : ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯
একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, কবি, গীতিকবি এবং লেখক।
তিনি ১৯৩৬ সালের ১৩ মার্চ বাংলাদেশের পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
পাবনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি কৃতিত্বের সাথে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বাংলায় বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫৯ সালে ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন, উভয় পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দ্য বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং (১৮১৮-১৮৩১)’ বিষয়ক গবেষণায় তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তী জীবনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন, এবং ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাল্যকালে গানের চর্চা করলেও গীতিকবি হিসেবেই তিনি প্রভূত সম্মান ও খ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁর জীবদ্দশায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই তিনি রচনা করেছেন অনেক কালজয়ী গান। তাঁর রচিত গীতিকবিতার সংখ্যা দুই হাজারের মতো হলেও জীবদ্দশায় তাঁর কেবল তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে; আপন যৌবন বৈরী (১৯৭৪), যেহেতু জন্মান্ধ (১৯৮৪) এবং আক্রান্ত গজল (১৯৮৮)। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তাঁর দুই শতাধিক গানের কবিতা নিয়ে ‘আমি সাগরের নীল’ নামে বই প্রকাশ করে। তাঁর শতাধিক জনপ্রিয় গানের উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে: তুমি যে আমার কবিতা, নদীর মাঝি বলে: এসো নবীন, ওই যে আকাশ নীল হলো আজ, তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে, সেই চম্পা নদীর তীরে ইত্যাদি।
তিনি ১৯৫২-তে পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৫৪-তে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ত্রয়োদশ স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮-তে বাংলায় বিএ অনার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯-এ বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক(সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি লন্ডন থেকে কমনওয়েলথ শিক্ষাবৃত্তিসহ বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং-১৮১৮-১৮৩১ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাহিত্যকর্ম
আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই আবু হেনা ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী। নিয়মিত লিখতেন কবিতা আর গান। স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেম, হৃদয়ের অন্তরঙ্গ অনুভূতি, গভীর আবেগ সব মিলিয়ে আধুনিক শিল্প চর্চার এক পরিশিলিত রূপের দেখা মেলে তার কবিতা আর গানে। ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে’,অশ্রু দিয়ে লিখা এই গান ভুলে যেও না, ‘নদীর মাঝি বলে’, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা’,‘এই বাংলার হিজল তমালে’র মত অনন্য সৃষ্টি রয়েছে আবু হেনা মোস্তফা কামালের। প্রবন্ধ, সমালোচনা, গবেষণাধর্মী লেখা সাহিত্যের এই ক্ষেত্রেও ভাষা শৈলি, বক্তব্য উপস্থাপন রীতি, রসবোধ ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে আবু হেনা স্বাতন্ত্র্য।
কবিতার বই
আপন যৌবন বৈরী (১৯৭৪)
যেহেতু জন্মান্ধ (১৯৮৪)
আক্রান্ত গজল (১৯৮৮)
প্রবন্ধ-গবেষণা
শিল্পীর রূপান্তর (১৯৭৫)
দি বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং (১৯৭৭)
কথা ও কবিতা (১৯৮১)
পুরস্কার
আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫)
সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৮৬)
একুশে পদক (১৯৮৭)
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯)
সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১)
আবু হেনা মোস্তফা কামালের পুত্র সুজিত মোস্তফা একজন নজরুল সংগীত শিল্পী, সংগঠক ও গবেষক।
বাংলা কবিতা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল আলাওল পুরস্কার (১৯৭৫), সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), সাদত আলী আকন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯১) ছাড়াও জীবদ্দশায় ও মৃত্যু-পরবর্তীকালে বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন। বাংলাদেশ একাডেমীর মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এইদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।