১৫৯ বার পড়া হয়েছে
আমজাদ হোসেন
জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
জন্ম: ১৪ আগস্ট ১৯৪২
মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮
অভিনেতা, লেখক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক। ব্যতিক্রমধর্মী এই চলচ্চিত্র নির্মাতা তার কর্মজীবনে ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেছেন।
সাবিনা ইয়াসমিনের (১৩টি) পর তিনি সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী।
এছাড়া তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ছয়টি ভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং এক আয়োজনে পাঁচটি বিভাগে (গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রের জন্য) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই দুটি কৃতিত্ব গড়েন গাজী রাকায়েত।
আমজাদ হোসেন
জন্ম১৪ আগস্ট ১৯৪২
জামালপুর, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ (বয়স ৭৬)
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
সন্তান
সাজ্জাদ হোসেন দোদুল
সোহেল আরমান
তিনি ১৯৬১ সালে তোমার আমার চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। পরে তিনি চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন এবং চলচ্চিত্র পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)। পরে তিনি নয়নমনি (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) দিয়ে প্রশংসিত হন। গোলাপী এখন ট্রেনে ও ভাত দে চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন।
লেখালেখির মাধ্যমেই তার সৃজনশীল জীবন শুরু। ছড়া দিয়ে সাহিত্যের অঙ্গণে তার প্রবেশ। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় বিখ্যাত দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায়। ছোটদের জন্যেও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এর রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
একই বছর মুস্তাফিজ পরিচালিত হারানো দিন ছবিতে অভিনয় করেন। পরিচালক সালাহ্উদ্দিন তার রচিত নাটক ধারাপাত অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ধারাপাত তার রচিত প্রথম চলচ্চিত্র এবং তিনি এই চলচ্চিত্রে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেন। পরবর্তীকালে তিনি জহির রায়হানের দলে যোগ দেন ও তার সহকারী হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লোককাহিনী নির্ভর বেহুলা (১৯৬৬)। ১৯৬২ সালে ছবিটির কাজ শুরু হয়। তিনি এই ছবির সংলাপ রচনা করেন এবং এতে অভিনয় করেন। এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে অভিনেতা রাজ্জাকের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, যে সম্পর্ক রাজ্জাকের মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।এছাড়া পরের বছর তিনি জহির রায়হানের আনোয়ারা (১৯৬৭) চলচ্চিত্রেও রাজ্জাকের সাথে অভিনয় করেন।
তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)। তিনি এটি নুরুল হক বাচ্চুর সাথে যৌথভাবে নির্মাণ করেন। একক পরিচালক হিসেবে তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র জুলেখা (১৯৬৭)। পরের বছর তিনি নুরুল হক বাচ্চু, মুস্তাফা মেহমুদ ও রহিম নওয়াজের সাথে যৌথভাবে দুই ভাই চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ছবিটির প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন জহির রায়হান। এছাড়া তিনি এককভাবে বাল্যবন্ধু (১৯৬৮) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
১৯৭০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়ার সংলাপ রচনা করেন এবং এতে মধু চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭০-এর দশকে তিনি নয়নমনি (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ও সুন্দরী (১৯৭৯) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। নয়নমনি ছবিটি তার নিজের রচিত নিরক্ষর স্বর্গে উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন। এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিটি দিয়ে তিনি দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ১০টি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। আমজাদ হোসেন এক বছরে রেকর্ড সংখ্যক পাঁচটি পুরস্কার অর্জন করেন, সেগুলো হল শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক), পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও গীতিকার। গোলাপী এখন ট্রেনের সফলতার পর তিনি সুন্দরী ছবি দিয়েও সফলতা অর্জন করেন। ছবিটি ৭টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং হোসেন শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা ও গীতিকার বিভাগে দুটি পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮০-এর দশকে কসাই (১৯৮০), জন্ম থেকে জ্বলছি (১৯৮২), দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), ভাত দে (১৯৮৪) কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র।[১০] ভাত দে ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ মোট ৯টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে এবং হোসেন জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, ও সংলাপ রচয়িতা বিভাগে তিনটি পুরস্কার অর্জন করেন।
আমজাদ হোসেনের দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান।
তার দুজনেই পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ইশকে মিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীকালে সরকারী অনুদানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ২৭শে নভেম্বর ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। আমজাদ হোসেন ২০১৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।২০শে ডিসেম্বর তার মরদেহ দেশে পৌঁছায় এবং দাফন শেষে জামালপুরের পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস
ধ্রুপদী এখন ট্রেনে
দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভালোবাসা
আমি এবং কয়েকটি পোস্টার
রক্তের ডালপালা
ফুল বাতাসী
রাম রহিম
আগুনে অলঙ্কার
ঝরা ফুল
শেষ রজনী
মাধবীর মধাব
মাধবী ও হিমানী
মাধবী সংবাদ
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস
যুদ্ধে যাবো
অবেলায় অসময়
উত্তরকাল
যুদ্ধযাত্রার রাত্রি
কিশোর উপন্যাস
জন্মদিনের ক্যামেরা
যাদুর পায়রা
ভূতের রাণী হিমানী
সাত ভূতের রাজনীতি
শীতের রাজা উহু কুহু
টুকটুক
রঙিন ছড়া কৃষ্ণচুড়া
গল্পগ্রন্থ
পরী নামা জোছনায় বৃষ্টি
কৃষ্ণলীলা
ফিকশন
ডারকেনিং ডে
রচনাসমগ্র
মুক্তিযুদ্ধের রচনাসমগ্র
মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র
মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কিশোর গল্প
আমজাদ হোসেনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস
উপন্যাসসমগ্র-১
নির্বাচিত গল্প
গল্পসমগ্র
কিশোর গল্পসমগ্র
কিশোরসমগ্র
মাধবী সমগ্র
চলচ্চিত্রের তালিকাসম্পাদনা
আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)
জুলেখা (১৯৬৭)
দুই ভাই (১৯৬৮)
বাল্যবন্ধু (১৯৬৮)
পিতা পুত্র (১৯৭০)
নয়নমনি (১৯৭৬)
গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)
সুন্দরী (১৯৭৯)
কসাই (১৯৮০)
দুই পয়সার আলতা (১৯৮২)
জন্ম থেকে জ্বলছি (১৯৮২)
ভাত দে (১৯৮৪)
সখিনার যুদ্ধ (১৯৮৪)
হীরা মতি (১৯৮৮)
গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৪)
আদরের সন্তান (১৯৯৫)
সুন্দরী বধূ (২০০২)
প্রাণের মানুষ (২০০৩)
কাল সকালে (২০০৫)
গোলাপী এখন বিলাতে (২০১০)
নাটকসম্পাদনা
জব্বার আলী এখন রিমান্ডে
হ্যালো জব্বার আলী
বাচসাস ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ
শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক – ১৯৯৩
অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার – ১৯৯৩, ১৯৯৪
উপন্যাসে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার – ২০০৪
ভূতের রাণী হিমানী-এর জন্য ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার – ২০০৮
ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি থেকে ফজলুল হক স্মারক পুরস্কার – ২০০৯
টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পুরস্কার আজীবন সম্মাননা -২০১০