১৫৯ বার পড়া হয়েছে
জাফর ইকবাল জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা
জন্ম: ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫০
মৃত্যু: ৮ জানুয়ারি ১৯৯২
অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী। তিনি আশির দশকের বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জাফর ইকবালের বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ও ছোট বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ দুজনেই সংগীতশিল্পী।
সংগীতশিল্পী
জাফর ইকবাল ১৯৬৬ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে গঠন করেন ব্যান্ড গ্রুপ ‘রোলিং স্টোন’ এবং তার সিনেমায় প্রথম প্লে-ব্যাক করা গান ছিল তার ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত ‘বদনাম’ ছবিতে প্রথম গান করেন ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও/আমি তো এখন আর নই কারও’। জাফর ইকবাল এর কণ্ঠে “হয় যদি বদনাম হোক আরো ” গানটি একসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় প্রথম প্লেব্যাকেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেতা। এরপর সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাঁকে দিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করিয়েছিলেন। তাঁর জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ অন্যতম। নিজের কণ্ঠে ‘কেন তুমি কাঁদালে’ শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের যুগে ‘সুখে থাকো নন্দিনী’ গানটি গেয়ে দারুণ সাড়া ফেলেছিলেন। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর উদযাপন বিশেষ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন ‘এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে’ গানটি।
জাফর ইকবাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের অন্যতম জাফর ইকবাল । তিনি চিরসবুজ নায়ক হিসেবে পরিচিত। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তার স্বাচ্ছদ্য বিচরণ। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৮৪ সালে আনোয়ার পারভেজের সুরে রাজ্জাক অভিনীত বদনাম ছবিতে ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূলত তিনি ছিলেন গিটারবাদক। ভালো গিটার বাজাতেন বলে সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অনেক ছবির আবহসংগীত তৈরি করিয়েছেন। তার সেই ছবিগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে জাফর ইকবাল চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম আপন পর। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। জাফর ইকবালের সাথে অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মত ছবি করেন। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ১৫০টি ছবি করেন।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন জাফর ইকবাল। ‘সূর্যসংগ্রাম’ ও এর সিকুয়াল ‘সূর্যস্বাধীন’ চলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের রাগী, রোমান্টিক, জীবন-যন্ত্রণায় পীড়িত কিংবা হতাশা থেকে বিপথগামী তরুণের চরিত্রে তিনি ছিলেন পরিচালকদের অন্যতম পছন্দ। সামাজিক প্রেমকাহিনী ‘মাস্তানে’র নায়ক জাফর ইকবাল রোমান্টিক নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে এক গ্রামীণ তরুণের চরিত্রেও দর্শক তাকে গ্রহণ করে।
জাফর ইকবাল ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতার বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশ হয়েই জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। জাফর ইকবাল অভিনীত ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘অপমান’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’ ,‘সন্ধি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র সুপারহিট হয়।
নায়ক জাফর ইকবাল সনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।
পারিবারিক অশান্তির কারণে জাফর ইকবাল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরবর্তীকালে মদ্য পানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ৮ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ
১৯৭০
আপন পর বশীর হোসেন প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র
সাধারণ মেয়ে শাহেদ ই আর খান
একই অঙ্গে এতরূপ
১৯৭৫
ফেরারি
মাস্তান
বাঁদী থেকে বেগম মোহসীন
১৯৭৬
সূর্য সংগ্রাম আব্দুস সামাদ
এক মুঠো ভাত ইবনে মিজান
দিনের পর দিন
বেদ্বীন
অংশীদার
মেঘ বিজলী বাদল
আশীর্বাদ
মর্যাদা
১৯৭৮
ফকির মজনু শাহ দারাশিকো
১৯৮৪
নয়নের আলো বেলাল আহমেদ
১৯৮৫
মিস লংকা
প্রেমিক মঈনুল হোসেন
১৯৮৭
ইমরান চৌধুরী
অপেক্ষা দিলীপ বিশ্বাস
ফুলের মালা
১৯৮৮
যোগাযোগ মঈনুল হোসেন
১৯৮৯
অবুঝ হৃদয়
১৯৯০
ভাইবন্ধু
ছুটির ফাঁদে শহীদুল হক খান
দোষী
বদনাম
প্রতিরোধ
গর্জন
১৯৯১
সন্ত্রাস শহীদুল ইসলাম খোকন
১৯৯২
চোরের বউ জহিরুল হক
শঙ্খনীল কারাগার মোস্তাফিজুর রহমান
অবদান রাজা