আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান
সংক্ষেপে এটিএম শামসুজ্জামান হিসাবেই অধিক পরিচিত। জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ জন্মদিন।
২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার।
অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয় বার, তন্মধ্যে দায়ী কে? (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে; ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯), চুড়িওয়ালা (২০০১) ও মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা বিভাগে; এবং চোরাবালি (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন। এছাড়া, ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।এটিএম শামসুজ্জামানের সন্তান ৬ ছেলেপুরস্কার
একুশে পদক
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (৬ বার)এটিএম শামসুজ্জামানের ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধূরির বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন জলছবি চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনা আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে? চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালিতে অভিনয় করেন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে? চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।
খল চরিত্র তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এর আগে নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও খল চরিত্রে তার কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল – অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক।
এছাড়াও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি।
১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধূরির বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনূর-রিয়াজ জুটির এবাদত নামের ছবিটি।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
১৯৬৯
মলুয়া চাঁদের দুলাভাই ফাল্গুনী
১৯৭০
বড় বউ নুরুল হক বাচ্চু
১৯৭২
অবুঝ মন কাজী জহির
ওরা ১১ জন বেজার আলী চাষী নজরুল ইসলাম
১৯৭৩
শ্লোগান কবীর আনোয়ার
স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা হাসমত অতিথি চরিত্রে
১৯৭৪
সংগ্রাম চাষী নজরুল ইসলাম
ভুল যখন ভাঙ্গলো রফিকুল বারী চৌধুরী
চোখের জলে আজিজ আজহার
১৯৭৫
লাঠিয়াল মকবুল নারায়ণ ঘোষ মিতা
অভাগী হাফিজ উদ্দিন
১৯৭৬
নয়নমনি আমজাদ হোসেন
১৯৭৭
যাদুর বাঁশি আব্দুল লতিফ বাচ্চু
১৯৭৮
গোলাপী এখন ট্রেনে আমজাদ হোসেন
অশিক্ষিত আজিজুর রহমান
১৯৭৯
সূর্য দীঘল বাড়ী মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী
১৯৮০
ছুটির ঘণ্টা আজিজুর রহমান
১৯৮২
লাল কাজল মতিন রহমান
১৯৮৩
পুরস্কার সি বি জামান
১৯৮৪
প্রিন্সেস টিনা খান আখতারুজ্জামান
১৯৮৫
রামের সুমতি শহীদুল আমিন
১৯৮৬
ঢাকা ৮৬ শফিকুর রহমান
১৯৮৭
দায়ী কে? আফতাব খান টুলু
রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত বুলবুল আহমেদ
১৯৯০
দোলনা বন্ধু শিবলি সাদিক
১৯৯১
পদ্মা মেঘনা যমুনা চাষী নজরুল ইসলাম
১৯৯৬
অজান্তে দিলীপ বিশ্বাস
১৯৯৭
স্বপ্নের নায়ক নাসির খান
১৯৯৯
তোমার জন্য পাগল শিল্পী চক্রবর্তী
১৯৯৯
ম্যাডাম ফুলি শহীদুল ইসলাম খোকন
২০০২
চুড়িওয়ালা আলম কিরণ
২০০২
শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ দেবাশীষ বিশ্বাস
২০০৩
জামাই শ্বশুর শাহাদাত খান
আধিয়ার সাইদুল আনাম টুটুল
২০০৪
শাস্তি চাষী নজরুল ইসলাম
মোল্লা বাড়ির বউ সালাউদ্দিন লাভলু
২০০৫
হাজার বছর ধরে সুচন্দা
আমার স্বপ্ন তুমি
২০০৬
দাদীমা এফ আই মানিক
আয়না কবরী
২০০৭
ডাক্তার বাড়ী আজিজুর রহমান
২০০৯
চাঁদের মতো বউ মোহাম্মদ হোসেন
মন বসেনা পড়ার টেবিলে আব্দুল মান্নান
এবাদাত এটিএম শামসুজ্জামান পরিচালনায় অভিষেক
২০১০
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে সোহানুর রহমান সোহান
২০১১
কুসুম কুসুম প্রেম গনু মুশফিকুর রহমান গুলজার
গেরিলা তসলিম সরদার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ
২০১২
লাল টিপ স্বপন আহমেদ
চোরাবালি রেদওয়ান রনি
২০১৩
পাগল তোর জন্য রে মঈন বিশ্বাস
২০১৪
দুটি মনের পাগলামি জুলহাস চৌধুরী পলাশ
২০১৫
দ্য স্টোরি অব সামারা রিকিয়া মাসুদ
দুই বেয়াইয়ের কীর্তি আব্দুল্লাহ আল মামুন
২০১৬
আইসক্রিম দাদু রেদওয়ান রনি
২০১৮
পাংকু জামাই আব্দুল মান্নান [
২০১৯
রাত্রির যাত্রী হাবিবুর রহমান হাবিব
অভিনয় জীবনের শুরুতে ষাটের দশকে টিভি নাটকে অংশগ্রহন ছিল তার। তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকসমূহ হল
রঙের মানুষ
ভবের হাট
ঘর কুটুম
বউ চুরি, পরিচালক – শিমুল সরকার
নোয়াশাল (২০১৪), পরিচালক – মীর সাব্বির
শতবর্ষে দাদাজান (২০১৫), পরিচালক – শাহীন মাহমুদ
পুরস্কার ও সম্মাননা
১৯৮৮ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা দায়ী কে? (১৯৮৭)
২০০০ শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯)
২০০৩ শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা চুড়িওয়ালা (২০০১)
২০১০ শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯)
২০১৩ শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা চোরাবালি (২০১২)
২০১৯ আজীবন সম্মাননা ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০১৭)
২০১৫ একুশে পদক শিল্পকলা
ঢাকা মডেল এজেন্সি এ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননা
২০১৯ বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক ২০১৯